বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে বছরের গোড়াতেই কেন্দ্র সাফ জানিয়ে দিয়েছিল যে আইনে ‘লাভ জেহাদ’-এর কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তার পরেও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি লাভ জেহাদ-এর বিরুদ্ধে আইন আনতে উঠেপড়ে লেগেছে। গেরুয়া শিবিরের নেতা-মন্ত্রীরাও প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করছেন। এবার যেমন লাভ জেহাদ নিয়ে সুর চড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিহারের বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহ। সামাজিক ঐক্যের পক্ষে লাভ জেহাদ ‘ক্যানসার’ বলে মনে করেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, লাভ জেহাদ রুখতে বিহারে আইন প্রণয়ন করা উচিত। বিহারে বিজেপির শরিক তথা মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দল জেডিইউ অবশ্য গিরিরাজের বক্তব্যকে আমল দিতে রাজি নয়। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে দুই শরিকের মনোমালিন্য।
প্রসঙ্গত, তথাকতিত ‘লাভ জেহাদ’ রুখতে আইন আনার তোড়জোড় শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, কর্ণাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য। বিহারেও সেই পথে হাঁটতে চাইছে পদ্ম-শিবির। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বেগুসরাইয়ে গতকাল গিরিরাজ বলেন, ‘লাভ জেহাদ দেশের সামনে বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আজ সামাজিক ঐক্য রক্ষার পক্ষে এটা ক্যানসারের মতো। অনেক রাজ্যই এর বিরুদ্ধে আইন আনতে চলেছে। লাভ জেহাদ রুখতে বিহার সরকারেরও আইন আনা উচিত।’ গিরিরাজের মতে, লাভ জেহাদ-বিরোধী আইনকে কখনওই সাম্প্রদায়িক তকমা দেওয়া উচিত নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আরও দাবি, ‘সকলকেই বুঝতে হবে, শুধু হিন্দুরা নন, লাভ জেহাদ অ-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের কাছেই বিপদ।’
তবে লাভ জেহাদ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জেডিইউ। জেডিইউ নেতা বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনার প্রয়োজন নেই। অনেকেই অনেক সময় নানা ধরনের মন্তব্য করেন। তা নিয়ে চর্চা করতে হবে এমন নয়।’ এ নিয়েই ফের মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে বিহারের শাসক জোটের অন্দরে। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে বিহারের কট্টরপন্থী বিজেপি নেতারা অভিযোগ তুলছেন, নীতিশ কুমার মুসলিম তোষণ করছেন। আর এবার নাম না করে গিরিরাজও বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্তরের মূলে রয়েছে তোষণ নীতি। এই নীতির মূলে আঘাত করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, বিহার সরকারের উচিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও আইন প্রণয়ন করা।
প্রসঙ্গয়, বিধানসভা নির্বাচনে আসনপ্রাপ্তির নিরিখে বিহারে এনডিএ-র বড় শরিকের তকমা হারিয়েছে জেডিইউ। তাদের থেকে বেশি আসন পেয়ে জোটের বড় দল হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপি। কিন্তু তা সত্ত্বেও পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো নীতিশকেই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়েছেন মোদী-শাহরা। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত, ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসলেও জোটে ছোট শরিক হওয়ায় এবার নীতিশকে চলতে হবে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে। নিজেদের নীতিগুলি কার্যকর করতে তাঁর ওপর চাপ বাড়াবেন বিজেপি নেতারা। শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে যেন সেই কাজই শুরু করে দিলেন গিরিরাজ। বিজেপির অন্দরে যিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদী এবং নীতিশ-বিরোধী হিসেবে পরিচিত।