প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট, এবং তারপর সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দিয়েছিল যে, করোনা আবহে আর পরিবেশ দূষণ রোধে এবছর রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে বন্ধ রাখা হবে ছটপুজোর অনুষ্ঠান। এই রায়ের পর থেকেই কোমড় বেঁধে ময়দানে নামে কলকাতা পুলিশ। আদালতের রায় যাতে ঠিকঠাকভাবে মানা হয়, তা নিশ্চিত করাই প্রধান কর্তব্য ছিল পুলিশ বাহিনীর। যেন এক অগ্নিপরীক্ষা! আর এই পরীক্ষাতে পাশ মার্ক নিয়েই বেরোলো শহরের পুলিশ প্রশাসন।
শুক্রবারের পর গতকাল ভোরেও রবীন্দ্র সরোবরের সব ক’টি গেটের মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্তত পাঁচ জন করে পুলিশকর্মী। এর মধ্যেই দু-এক পশলা বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে যায় চতুর্দিক। সরোবরের তিন নম্বর গেটে দাঁড়ানো পুলিশের এক আধিকারিককে সেইসময় এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বললেন, “যেন একটা হাই ভোল্টেজ ম্যাচ জিতলাম মশাই! রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধ নিয়ে গত কয়েক দিন যা উত্তজেনা, তা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের থেকে কম কিসে?” পুলিশ আধিকারিক হেসে বললেন, “সত্যিই তা-ই। তবে এখনও কিছুটা সময় বাকি। পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার সময় আসেনি।’’ তবে কালকের গোটা দিনেও ঘটেনি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা। উল্লেখ্য, ছটের পুণ্যার্থী বনাম প্রশাসনের এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরাও।
সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা রামেশ্বর চট্টোপাধ্যায় প্রতিদিনই ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবরে এসে সূর্যপ্রণাম করেন। তার পরে বেশ কিছু ক্ষণ সেখানেই হাঁটেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সরোবর চত্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ভিতরে ঢুকতে পারেননি। তবে তাতে তাঁর বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। বরং সরোবরের পরিবেশ বাঁচানোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। রঞ্জন দাস নামে আর এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বলেন, “ছটের জন্য টানা দু’দিন সরোবরে হাঁটতে পারলাম না। তাই রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছি। ছট বন্ধ হওয়ায় সরোবরে আসা পরিযায়ী পাখিরাও একটু শান্তি পাবে।’’
গত শুক্রবার সরোবরের পাঁচটি গেটই ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। শেষ লগ্নে এসে সমস্ত উদ্যোগ যাতে ভেস্তে না যায়, তার জন্য শনিবারও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সব ক’টি গেটে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। বিশেষ করে, লেক গার্ডেন্স স্টেশনের লেভেল ক্রসিংয়ের পিছনের রাস্তায় আগের রাত থেকেই ব্যারিকেড বসানো হয়েছিল। বরজ রোডের দু’পাশে যে পাঁচটি গেট রয়েছে, তার সামনে দিয়ে বার বার টহল দিয়েছে পুলিশের সাদা ভ্যান। কাউকে দেখে ছটের পুণ্যার্থী বলে মনে হলেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, এ দিন সকালে পুণ্যার্থীরা আর গেটের সামনে আসেননি।
পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “শেষমেশ রবীন্দ্র সরোবর নিজের শরীর-স্বাস্থ্য বাঁচিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াল। এই জয় সরোবরের একান্ত নিজস্ব। আশা করি, আর কোনও দিনই সেখানে ছটপুজো হবে না।’’ এদিকে, কাল সকালে এক ছবি ছিল সুভাষ সরোবরেও। বেলেঘাটা থেকে শুরু করে কাঁকুড়গাছি, মানিকতলা-সহ যে সব রাস্তা দিয়ে সুভাষ সরোবরে সহজে পৌঁছনো যায়, সেখানেও সতর্ক ছিল পুলিশ। কোথাও কোথাও ব্যারিকেডও দেওয়া ছিল শুক্রবার থেকে। প্রসঙ্গত, কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার আগে থেকেই দুই সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করতে সমস্ত রকম পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এছাড়া, প্রচারাভিযানেড ফলেও মানুষ অনেকটা সতর্ক হয়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন।
