বিশ্বের প্রথম সারির অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আগে তা বলেছিলেন। কিন্তু বার বার বলা সত্ত্বেও, এখনও পুরোদস্তুর সেই রাস্তায় হাঁটেনি কেন্দ্র। এবার সেই একই কথাই বলল রাষ্ট্রপুঞ্জ। ভারত-সহ বিশ্ব অর্থনীতির গায়ে কোভিডের ক্ষত সারাতে ফের সকলের ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করার দাওয়াইয়ের পক্ষে জোরালো সওয়াল করল তারা।
করোনার ধাক্কা সামলে বিশ্ব অর্থনীতি কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ন্যূনতম আয়ের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে সেখানেই। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প কেমন হওয়া উচিত, সেই সম্পর্কিত গবেষণা ও (নীতি নির্ধারণের) চিন্তা-ভাবনায় সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করার বিষয়টিতে।’
অতিমারির আক্রমণে ভারত-সহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি বিধ্বস্ত। যাঁরা কাজ খুইয়েছেন, তাঁদের অনেকে কবে আবার ওই একই বেতন বা মজুরির কাজ খুঁজে পাবেন, তার ঠিক নেই। এই পরিস্থিতিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ওই দরিদ্রদের ন্যূনতম আয় না জুগিয়ে তাঁদের সমস্যার সমাধান কিংবা অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরানো কঠিন বলে ওই আন্তর্জাতিক সংগঠনটির দাবি।
ভারতে করোনা এবং তা রুখতে লকডাউনের জেরে আতান্তরে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ হারানো কর্মী, সমস্ত দরিদ্র পরিবারের জন্য এই ন্যূনতম আয়ের পক্ষে গত কয়েক মাস নাগাড়ে সওয়াল করেছেন বিশ্বের বহু প্রথম সারির অর্থনীতিবিদ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেছেন, এই খাদ থেকে দরিদ্রদের টেনে তুলতে ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও বার বার বলেছেন, দরকারে প্রস্তাবিত ‘ন্যায়’ প্রকল্পের নাম পাল্টে প্রতি মাসে সমস্ত দরিদ্র পরিবারকে সংসার চালানোর ন্যূনতম টাকা জোগাক সরকার। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের ‘আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজের’ তৃতীয় কিস্তি ঘোষণার দিনে এই দাবি ফের তুলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
কিন্তু পাল্টা হিসেবে কেন্দ্রের বক্তব্য, দেশের প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে নিখরচায় রেশন দিচ্ছে তারা। প্রধানমন্ত্রী কিসান নিধি প্রকল্পের আওতায় বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু খাবার কিংবা চিকিৎসা নিশ্চিত করা যথেষ্ট নয়। কারণ, তার বাইরে টেনেটুনে সংসার চালাতেও যে টাকা লাগে, এই অতিমারির সময়ে বহু পরিবারের পক্ষে তা জোগাড় করা শক্ত। সেই যুক্তি উঠে এসেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টেও।
অতিমারির সময়ে সামাজিক সুরক্ষার বৃত্ত যে অনেক বেশি চওড়া করা জরুরি, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছে এই রিপোর্ট। তা সে কাজ হারানো কর্মীর জন্য বেকার ভাতা হোক, বা আপাতত স্কুলে যেতে না-পারা পড়ুয়াদের পুষ্টি, পড়ার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্র প্রশ্নের মুখে। সংসদে পাশ হওয়া নতুন শ্রম বিধিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তা আরও প্রশস্ত হয়েছে। বেকার ভাতার কথা সেখানে না থাকায় বিঁধেছেন বিরোধীরা।
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে কাজের সুযোগ বাড়তে থাকলেও, অক্টোবরে ফের তা ধাক্কা খেয়েছে। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই মাসে বৃদ্ধি তো দূর, উল্টে তা কমে গিয়েছে ০.৬ শতাংশ। সূত্রের ইঙ্গিত, আশঙ্কার একই রকম ছবি ফুটে উঠছে ইপিএফের খাতার হিসেবেও। দেখা যাচ্ছে, অক্টোবরে ইপিএফ জমা দেওয়া সংস্থার সংখ্যা কমেছে ৩০ হাজারের বেশি। আর ওই প্রকল্পে পেনশন খাতে টাকা কাটানো সদস্যের সংখ্যা কমেছে ১৮ লক্ষ।