ফুটবলারদের একঘেয়েমি কাটাতে ইন্ডোর গেমের পাশাপাশি একজন ক্রীড়া মনোবিদেরও শরণাপন্ন হল এস সি ইস্টবেঙ্গল। সপ্তাহে দুই অথবা তিন দিন অনুশীলনের পরে ভিডিওকলে ফুটবলারদের ক্লাস নিচ্ছেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানের স্নাতক নিকোলা। সূত্রের খবর, এই উদ্যোগের নেপথ্যেও রয়েছেন রবি ফাওলার।
লাল-হলুদের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই লিভারপুল কিংবদন্তি ক্লাব কর্তাদের বোঝান, একই দেশের লিগে খেলা ফুটবলারদের দলে নিতে চান। তাঁর যুক্তি ছিল, আইএসএলে দেরিতে অন্তর্ভুক্তি হওয়ায় এমনিতেই বিভিন্ন দেশ থেকে ফুটবলার খুঁজে আনার মতো পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে না। তবে ফুটবলার নির্বাচন থেকে অনুশীলন- সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে শুরু হলেও ফাওলারের উদ্বেগ দূর হচ্ছিল না। জৈব সুরক্ষা বলয়ে পাঁচ মাসের বন্দী জীবনে দলের ফুটবলারদের উপরে তৈরি হওয়া মানসিক চাপ কী ভাবে কাটাবেন, তা নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলেন। এরপরই ফাওলারের পরামর্শেই দলে নিয়োগ করা হয় নিকোলাকে।
সেই মনোবিদ কী পরামর্শ দিচ্ছেন? লাল-হলুদ শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল চমকপ্রদ তথ্য। ফুটবলারদের সঙ্গে খেলা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও আলোচনাই করছেন না নিকোলা। প্রত্যেকের অতীত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাইছেন। কখনও জিজ্ঞেস করছেন স্ত্রী, বান্ধবী, বাবা ও মায়ের সঙ্গে দিনে কত বার কথা বলছেন ফুটবলারেরা। জেনে নিচ্ছেন, ফুটবলের বাইরে কার কী নিয়ে আগ্রহ। কে কী ধরনের সিনেমা দেখতে বা গান শুনতে পছন্দ করেন। আইএসএল শেষ হওয়ার পরে কে কোথায় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাও জানতে চেয়েছেন নিকোলা। ব্যক্তিগত জীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটির খোঁজ নিচ্ছেন তিনি।
লাল-হলুদের ফুটবলারেরাও অভিভূত নতুন এই অভিজ্ঞতায়। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা টেবিল টেনিস, ক্যারম, বিলিয়ার্ডস, প্লে-স্টেশন খেললেও একাকীত্ব কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছি না। নিকোলা ম্যাডামের ক্লাস নেওয়ার পর থেকে অনেকটাই চনমনে লাগছে।’’ কেন? যোগ করলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ফুটবল নিয়ে কোনও কথাই বলেননি ম্যাডাম। উনি বলেন, ফুটবল নিয়ে আলোচনা বা পরামর্শ দেবেন কোচেরা। আমি তোমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে চাই। যাতে কার কী সমস্যা হচ্ছে, খোলাখুলি আমাকে বলো।’’
সূত্রের খবর, এই মনোবিদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই লাল-হলুদ অন্দরমহলের ছবি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। প্রত্যেকেই খোশমেজাজে রয়েছেন। ফাওলারের সহকারী প্রাক্তন এভার্টন ও ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মিডফিল্ডার অ্যান্টনি গ্র্যান্ট কয়েক দিন আগেই জানিয়েছিলেন, ফাওলার ফুটবলজীবনে সব সময় খুব চনমনে থাকতেন। কখনও তাঁকে হতাশ হয়ে পড়তে দেখেননি। জানালেন, ফাওলার বিশ্বাস করেন, ফুটবলারদের উপরে অকারণে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে বিপর্যয় অনিবার্য। এই কারণেই বুধবার ফুটবলারদের বিশ্রাম দিয়েছিলেন লিভারপুল কিংবন্তি।