দেশের শীর্ষ আদালত আজ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে করোনা আবহে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো পালন করে পরিবেশ দূষণ করা যাবে না। এমনকি রাজ্য সরকারও সমস্তরকম নিয়মবিধি মেনে ছট পালনের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যবাসীকে। তবে যে যা-ই বলুক, ছটপুজোয় কোনও রকম বিধি-নিষেধের পক্ষপাতী নয় রাজ্য বিজেপি। তাদের সাফ বক্তব্য, যে পুজোয় যা করণীয়, তাতে দল কোনওরকম বাধা দেবে না। বরং, আদালত বা সরকার বাধা দিলে গেরুয়া শিবির প্রশ্ন তুলবে।
রবীন্দ্র সরোবর বা সুভাষ সরোবরের মতো জলাশয় দূষিত করে ছট উৎসব পালনে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আজ দেশের শীর্ষ আদালতও সেই রায় বহাল রেখেছে। সরকারি সূত্রের দাবি, কলকাতা এবং আশপাশে ১৩০০-র মতো জলাশয় খনন করা হয়েছে ‘জল ধরো, জল ভরো’ কর্মসূচির অধীনে। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার চায়, ছটে সেগুলিই ব্যবহার করা হোক। আর রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবরে ছটপুজো ঠেকাতে তালা দিয়ে রাখা হবে।
পরিবেশ-বিধি এবং করোনা-কালে আদালতের রায় মাথায় রেখে সমস্ত নিয়মবিধি সুশৃঙ্খলভাবে পালন করে ছটপুজো করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের পথ ধরে একই বক্তব্য বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বেরও। কিন্তু বিজেপি কোনও বিধিরই পরোয়া করতে নারাজ! তাদের পাল্টা যুক্তি, অন্য কোনও ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিধি প্রয়োগ না হলে পুজোর বেলায় পরিবেশ বিধি মানতে হবে কেন? রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের মতে, বিজেপি এমনিতেই অবাঙালি-ঘেঁষা দল হিসেবে বাংলায় পরিচিত। এখন ছটপুজোর অছিলায় ভোট-মুখী রাজ্যে তারা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণই শুধু নয়, ভাষাগত বিভাজনও তৈরি করার চেষ্টা করছে।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এদিন বলেন, ‘‘আমরা কোথাও ছটে বাধা দেব না। কাউকে বারণও করব না, বোঝাবও না। যাঁরা ছট পালন করেন, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী ছটপুজোর অনুষ্ঠান করবেন।’’ কিন্তু পরিবেশ দূষণ আটকাতে কলকাতা হাইকোর্ট রবীন্দ্র সরোবরের মতো জায়গায় ছট পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাজ্য সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা মানবে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির অবস্থান কী? খোলাখুলি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দিকে আঙুল তুলে সায়ন্তন বলেন, ‘‘ছটে আদালতের নির্দেশ মানবে আর অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে মানবে না, এই দু’রকম নীতি আমরা মানি না।’
বিজেপির এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল-সহ সিপিএম এবং কংগ্রেস দু’দলেরই অভিযোগ, করোনা-আবহে পরিবেশ বিধিকেও অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রের শাসক দল বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণের তত্ত্ব আমদানি করছে এবং রাজ্যে ‘মৌলবাদী’ পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। তৃণমূলের সাফ বক্তব্য, ‘‘পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তার মধ্যে অপযুক্তি এনে বিষয়টাকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা নিন্দনীয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, উৎসবকেও নানা সময়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ।’’