রবিবার বেলা সোয়া বারোটায় ইহজগতের ‘সংসার’ ছেড়ে চলে গেছেন বাঙালির প্রিয় ‘অপু’। আজ দেখতে দেখতে তিনদিন হয়ে গেল। ভাইফোঁটা, দিওয়ালির মধ্যেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর শোকে এখনও জর্জরিত গোটা বাংলা। আলোর এই উৎসবের মধ্যেও একরাশ অন্ধকার জমাট বেঁধেছে বাঙালির মনে। রবিবার সৌমিত্রবাবুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন কন্যা, তবে মুহূর্তেই নিজেকে সামলে লক্ষ লক্ষ সৌমিত্র অনুরাগীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ওঁর জীবনটাকে আমরা সেলিব্রেট করব। আমি সবাইকে বলছি, আপনারা দুঃখ পাবেন না, কষ্ট পাবেন না। আমরা হাসিমুখে বাবার কথা ভাবব, ওনার জীবনটাকে আদর্শ মেনে সেলিব্রেট করে চলব।”
আজ, মঙ্গলবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আত্মার শান্তিতে শ্রাদ্ধের কাজ পালন করলেন পৌলমী। দক্ষিণ কলকাতার এক মঠে হল এদিনের এই ধার্মিক অনুষ্ঠান। এই সম্পর্কে পৌলমী বসু জানিয়েছেন- “ই জায়গাটা বেশ সবুজে পরিপূর্ণ। এখানে বাবার কাজ করে মনে একটা শান্তি লাগছে। আমার বাবার যদিও এই ধরণের ক্রিয়াকলাপে খুব একটা বিশ্বাস ছিল না। পারলৌকিক আচারের আনুষ্ঠানিকতাতেও কোনও ভক্তি ছিল না, তবুও যেহেতু মা মানেন- তাই কাজ করতে হত। এই কারণেই বাবারও পছন্দ হতে পারে, এমন একটা জায়গা বাছলাম। এতদিন ধরে চলতে থাকা যুদ্ধ-টানাপোড়েনের পর আমিও একটু শান্তি অনুভব করছি।”
হিন্দু রীতি মেনেই আজ তিনদিনে বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সারলেন কন্যা পৌলমী। অনুষ্ঠানে কেবলমাত্র সৌমিত্রবাবুর থিয়েটার গ্রুপ মুখোমুখির হাতেগোনা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। নিয়ম মেনে পরবর্তীতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সারবেন ছেলে সৌগত চট্টোপাধ্যায়। এদিন এমনটাই জানিয়েছেন পৌলমী। এছাড়াও, টালিগঞ্জের আর্টিস্টস ফোরাম থেকে এবং পৌলমীদের ‘মুখোমুখি’ নাট্যদলের তরফে কিংবদন্তি অভিনেতার স্মৃতিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সূত্রের খবর রাজ্য সরকারের তরফেও সৌমিত্র স্মরণে একটি শোকসভা আয়োজিত হতে পারে। এদিকে, নিজের বাবার নামে একটি আর্কাইভ তৈরির সিদ্ধান্তও নিয়েছেন পৌলমী। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও, সেখানে যে বাঙালির এই কিংবদন্তিকে নিয়ে সমস্ত তথ্যই থাকবে, তা পরিষ্কার।