১৯৬৯ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে সম্মানজনক ট্রেন বলে খ্যাতি রয়েছে রাজধানী এক্সপ্রেসের। সেই ট্রেনেই কিনা আরশোলার দাপটে আতঙ্কিত যাত্রীরা! তাও ফার্স্ট ক্লাস এসি কূপে। হাওড়ার ডিআরএমের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন এক যাত্রী, যিনি পেশায় চিকিৎসক। আর এ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। যাত্রীর অভিযোগ, করোনা কালে দূরত্বের আশায় সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে ফার্স্ট ক্লাস এসি কূপের টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু যাত্রা করতে গিয়ে এমন বিপত্তি হবে ভাবতেও পারেননি। আরশোলার দাপটে সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি বলেই জানান তিনি।
শনিবার উৎপলকুমার মণ্ডল নামের ওই চিকিৎসক যাত্রী দিল্লি থেকে হাওড়ার রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়েছিলেন। কেবিনের আলো নেভানোর কয়েক মিনিট পরেই একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। গায়ের ওপর দিয়ে কিছু একটা যেন চলে গেল! কয়েক মিনিট পর ফের একই অনুভূতি হওয়ায় ধড়মড় করে উঠে বসেছিলেন তিনি। দিল্লি-হাওড়া রাজধানী স্পেশ্যালের এসি ফার্স্ট কেবিনে এমন হওয়ার কথা নয় একেবারেই। ব্যাপারটা কী হচ্ছে বুঝতে কেবিনের আলো জ্বালাতেই একেবারে হতবাক যাত্রীরা। কেবিনের মধ্যে থিকথিক করছে আরশোলা!
কালীপুজোয় রাতের এই অস্বস্তিকর পরিবেশের জন্য তিনি রেলের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণেই এই আরশোলার দাপট বলে অভিযোগ তাঁর। উৎপলবাবু বলছেন, ‘আমি থাকি দিল্লিতে। বাবা কলকাতায় রয়েছেন। উনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমাকে কলকাতায় আসতে হল। প্লেনে আসতে পারতাম। কিন্তু দূরত্ববিধি মানতে সুবিধা হবে বলে রাজধানী এসি ফার্স্ট কেবিন বুক করে আসছিলাম। সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। তার বিনিময়ে এই পরিষেবা, তাও রাজধানী এক্সপ্রেসে! কল্পনাও করা যায় না।’
এ নিয়ে হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান জানান, অভিযোগ পেয়ে ওই কোচ পরীক্ষা করতে যান সিনিয়র ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়া পেস্ট কন্ট্রোল বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ট্রেনে আরশোলা, ছারপোকা, ইঁদুর তাড়ানোর দায়িত্ব রেল প্রাইভেট পেস্ট কন্ট্রোল সংস্থাকে দিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রাইভেট সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ যেমন করে না, তেমনই নিম্নমানের কেমিক্যাল প্রয়োগে সমস্যা থেকে যায়। রেল সূত্রে খবর, আরশোলা, ছারপোকার জন্য কেমিক্যাল জামরায় দেওয়া ছাড়া ফগ দেওয়া হয়। ইঁদুরের জন্য ইয়ার্ডে ওষুধ ও কামরার ভিতরে আঠার প্যাড দেওয়া হয় যাতে ইঁদুর আটকে যায়।
হাওড়ার ডিআরএম আবার এই ধরনের দৌরাত্ম্যের জন্য যাত্রীদের পরোক্ষে দায়ী করেছেন। বলেন, কামরার এদিক-সেদিক খাবার ফেলায় এই সমস্যা তৈরি হয়। পাশাপাশি আইআরসিটিসির কর্মীরাও খাবার ফেলেন বলে তিনি জানান। এই যুক্তিকে যদিও উপযুক্ত মনে করেন না যাত্রীরা। তাদের কথায়, ট্রেনে তো যাত্রীরা খাবার খাবেনই। তা বলে আরশোলার দাপট সইতে হবে? ভাল পরিষেবা পেতেই তো টাকা খরচ করে টিকিট কাটা। স্বাভাবিকভাবেই শনিবার রাতে রাজধানীর এসি ফার্স্ট কেবিনে ভ্রমণরত উৎপলবাবুর অভিজ্ঞতা ফের স্পষ্ট করে দিল ভারতীয় রেলের অব্যবস্থার ছবি।