বাঙালিকে ‘ফাইট’ করতে শিখিয়েছিলেন তিনি। নিজের সিনেমার মাধ্যমেই দর্শকদের জীবনবিমুখ না হয়ে বাঁচার মধ্যে সার্থকতা খুঁজতে শিখিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৪০ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে লড়াই করেছিলেন। হারিয়ে দিয়েছিলেন করোনার মত মারণ ভাইরাসকেও। কিন্তু শেষ অবধি যুদ্ধজয় করতে পারলেন না। ৮৬ বছরে শেষ হল বাঙালির ‘অপু’র পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চলে গেলেন বাংলা ছবির প্রবীণ মহাতারকা, অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি-চিত্রকর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ দুপুর সওয়া ১২টায় মিন্টো পার্কের বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বের বেলভিউয়ে ভর্তি হন সৌমিত্র। তিনি একটা সময়ে ক্যানসারেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই অসুস্থতা স্বভাবতই তাঁকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। ফলে কখনও উন্নতি কখনও অবনতি, এই দোলাচলেই চলছিল হাসপাতাল-বন্দী সৌমিত্রর জীবন। এ ছাড়াও একাধিক কো-মর্বিডিটি ছিল তাঁর। তার জেরে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে তাঁর। তবুও প্লাজমা থেরাপি, শ্বাসনালিতে অস্ত্রপচার-সহ নানা ভাবে অভিনেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।
কিন্তু গত শুক্রবার থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটে। হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’ও। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ‘মিরাকল’ না ঘটলে সৌমিত্র বাবুর সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব। তার পরই দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে আসে অনুরাগীদের মধ্যে। রাতভর সেই নিয়ে টানাপড়েনের পর এ দিন সকাল হতেই হাসপাতালে পৌঁছে যান সৌমিত্রর পরিবারের লোকজন।
তবে সেইসময় বাবার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘‘বাবার স্বাস্থ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। তার পর এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব আমরা। চিকিৎসকেরা ওখানে থাকতে বলেছেন আমাদের।’’ অবশেষে বেলা ১২:১৫ নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, মৃত্যু হয়েছে বাংলা তথা দেশের এই কিংবদন্তি অভিনেতার। খবর প্রকাশ্যে আসতেই বেলভিউয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।