দিনটি ছিল ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ। ইডেনে বাংলা বনাম দিল্লীর রনজি ট্রফি ফাইনালের রেস্ট ডে। বঙ্গ ক্রিকেটাররা তখন বাড়ি থেকেই মাঠে যাতায়াত করতেন। কৌতূহল হল এমন প্রবল চাপের ম্যাচে রেস্ট ডে’তে কীভাবে নিজেকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করছেন অরুণ লাল। বিকেলের দিকে তাঁর বাড়িতে ফোন করতেই ওদিক থেকে ভেসে এসেছিল এক মহিলার কণ্ঠস্বর। ‘লালজি’র স্ত্রী রীনাদেবী। সময় নষ্ট না করে জানিয়েছিলেন, ‘এখনই রাসবিহারী অ্যাভেনিউয়ের ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক সন্নিকটস্থ ‘ডাকাতে কালীবাড়ি’তে চলে যান। অরুণকে পেয়ে যাবেন।’
রীনাদেবীর পরামর্শ শিরোধার্য করে তড়িঘড়ি সেখানে গিয়ে দেখা গেল মা কালীর সামনে বসে প্রার্থনা করছেন অরুণ লাল। বোঝা গেল, দিল্লীকে হারিয়ে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার আশা নিয়ে মায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন দলের অন্যতম সেরা তারকা।
সেবার দীর্ঘ ৫১ বছর পর রনজি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা। ডাকাতে কালীবাড়ির মায়ের আশীর্বাদে অরুণ লালই হয়ে উঠেছিলেন জয়ের নায়ক। মায়ের কাছে তাঁর প্রার্থনা বৃথা যায়নি। অরুণ লাল সেদিনও বলছিলেন, ‘এখনও সময় সুযোগ পেলেই ডাকাতে কালী বাড়িতে চলে যাই। ওটাই আমার শক্তিপীঠ। মায়ের আশীর্বাদে মোহন বাগানের হয়েও প্রচুর ট্রফি জিতেছি। ভারতের টেস্ট টিমে ফিরে পেয়েছিলাম জায়গা। ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পরেও গিয়েছিলাম মায়ের মন্দিরে। বাংলার কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পরেও দর্শন করতে গিয়েছিলাম মা’কে। ডাকাতে কালীবাড়ির মাহাত্ম্য কোনওদিনই ভুলব না।’
মায়ের আশীর্বাদে লক্ষ্যে সফল হয়েছিলেন লালজি। মনোজ প্রভাকর, অতুল ওয়াসন, মনিন্দর সিংরা তাঁকে আউট করতে পারেননি। দ্বিতীয় দিন বিকেলে ব্যাট করতে নামা অরুণ পঞ্চম দিনে অঙ্ক কষে খেলে কোশেন্টে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে মাঠ ছেড়েছিলেন। উপহার দিয়েছিলেন অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস।