জানবাজারের রানী রাসমণি তখনও দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দির গড়ে তোলেননি। সেই মন্দির তৈরির পাঁচ বছর আগেই বরাহনগরে গঙ্গার ধারে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিল জয় মিত্র পরিবার। জনশ্রুতি, গঙ্গায় নৌকা করে যাওয়ার সময় সেই মন্দির দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রানি রাসমণি। পরবর্তীকালে এই কালীবাড়ির অনুকরণেই প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণেশ্বরের মন্দির ও মা ভবতারিণীর বিগ্রহ। ভাস্কর সেই একই মানুষ। বরাহনগরের এই মন্দিরেই অবস্থান কৃপাময়ী কালী মায়ের। যার নামকরণ শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের। তিনি এই মন্দিরে একাধিকবার এসেছেন।
শোভাবাজার অঞ্চলের বাসিন্দা ও তৎকালীন জমিদার জয়নারায়ণ মিত্র কৃপাময়ী কালীর বিগ্রহ-যুক্ত একটি নবরত্ন মন্দির ও বারোটি আটচালা শিবমন্দির নিয়ে এই মন্দির চত্বরটি নির্মাণ করেছিলেন ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে। দক্ষিণেশ্বরে রানি রাসমণির ভবতারিণী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠারও পাঁচ বছর আগে। প্রতিষ্ঠাতার নাম অনুসারে এই কৃপাময়ী কালীর মন্দিরটি ‘জয় মিত্র কালীবাড়ি’ নামেই পরিচিত। একসময় বরাহনগর-মালপাড়ার কুঠিঘাট অঞ্চলের কৃপাময়ী কালীবাড়ির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে পরিবারের সদস্যরা নিজ চেষ্টায় পুনরদ্ধার করেছেন নিজেদের হারানো গৌরব।
মূল কোনও কালী মন্দিরের সঙ্গে চার-ছয়-আট-বারো বা তারও বেশি আটচালা শিবমন্দির যুক্ত যে সমস্ত ‘টেম্পল কমপ্লেক্স’ সমগ্র বাংলায় দেখা যায়, এটিও ঠিক তেমনই। মন্দিরের ঠিক সামনে একটি বড় নাটমন্দির আছে, যা একসময় ভেঙে গিয়েছিল। তা ফের সারানো হয়েছে। আত্মপ্রকাশ হয়েছে নবরূপে। নবরত্ন মন্দিরের পাশে প্রতি সারিতে ছ’টি করে, মুখোমুখি দু’সারি মোট বারোটি আটচালা শিবমন্দির রয়েছে। প্রতিটি মন্দিরের গর্ভগৃহে রক্ষিত শিবলিঙ্গগুলি ‘অমরনাথ’, ‘বৈদ্যনাথ’, ‘পশুপতিনাথ’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘ভুবনেশ্বর’ প্রভৃতি বিভিন্ন নামে চিহ্নিত। সংস্কারের জন্য মন্দিরগুলির অবস্থা এখন খুবই ভালো।
হুগলি নদীতে মিত্রদের ঘাটের দক্ষিণে মন্দিরের সিংহ দরজা। তারপরেই রয়েছে সারি সারি তুলসীমঞ্চ। মন্দিরের দেওয়ালে মিনারের কারুকার্য করা। মেঝে শ্বেতপাথরের। প্রস্তরময়ী কালীর বিগ্রহটিও পাথরের বেদীর উপর স্থাপিত। শোনা যায়, মন্দিরের কালীমূর্তিটি হুগলি নদীতে ভেসে আসা শিলাখণ্ডে নির্মিত। কৃপাময়ী কালীমন্দিরে পূজায় নিষ্ঠা ও শুদ্ধাচারের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। মন্দির প্রতিষ্ঠাতা জয়রাম মিত্ররর পূজাপাঠ ও দানধ্যানের জন্য সেইসময় যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। নিষ্ঠা সহকারের পূজার প্রথাও তাঁর সময় থেকেই চলে আসছে। দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে মহাধুমধামে এখানে কালীপূজা হয়ে থাকে।