আড়াই দশক পরে বিহারের বিধানসভা ভোটে ফের ভাল ভাবে উপস্থিতি জানান দিয়েছে তিন বাম দল। প্রায় সব সমীক্ষাতেই দেখানো হয়েছিল বিহারে মহাজোটের অংশীদার তিন বাম দল মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য আসন পেতে পারে। হয়েছেও তাই। ২৯টিতে প্রার্থী দিয়ে সিপিআইএম লিবারেশন, সিপিআই এবং সিপিএম মিলে ১৬টি আসন জিতেছে। একা লিবারেশনই জিতেছে ১২টি। আর এই জয়ের পরে একুশের ভোটে বাংলার বামেদের কী করা উচিত তা নিয়ে লিবারেশন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এই পরামর্শ দিয়েছেন যে বিজেপিকে ঠেকাতে প্রয়োজনে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে। তৃণমূলকে পছন্দ করি না বলে অপছন্দের বিজেপিকে বাড়তে দেব, তা হয় না। বাংলার বামপন্থীদের সমস্যা হলো তাঁরা জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাজ্য রাজনীতিকে দেখতে চাইছেন না। স্বাভাবিকভাবেই লিবারেশন নেতার এই অবস্থানে বেজায় চটেছে বাংলার সিপিএম।
প্রসঙ্গত, একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বাংলার একটা সমস্যা হচ্ছে আমাদের অনেক বামপন্থী সাথী জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাজ্য রাজনীতিকে দেখছেন না। ওখানে লড়াইটা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে সুযোগ পাচ্ছে বিজেপি।’ এখানেই থামেননি দীপঙ্কর। তাঁকে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনাদের সঙ্গে নিতে আপত্তি নেই? জবাবে দীপঙ্কর বলেন, ‘এখানে কংগ্রেস বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তির বিষয় নেই। আমাদের বুঝতে হবে দেশের গণতন্ত্র এবং মানুষের কাছে এখন পয়লা নম্বর বিপদ বিজেপি। তার সঙ্গে তৃণমূল ও কংগ্রেসকে এক ব্র্যাকেটে ফেলা ঠিক নয়।’ দীপঙ্করের এই অবস্থানে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। নেতারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া না দিলেও ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, দীপঙ্কর তাত্ত্বিক, ভাল ছাত্র হতে পারেন। কিন্তু বাংলার রাজনীতি সম্বন্ধে জ্ঞান কম।
বঙ্গ সিপিএমের একপক্ষের দাবি, তিনি জেনেশুনেই এ কথা বলেছেন। একুশের ভোটের কথা মাথায় রেখে এটা আসলে চাপের খেলা। তাঁদের ব্যাখ্যা, বামফ্রন্টের বাইরে থাকা বাম দলগুলির সঙ্গে যে ১৭ দলের কর্মসূচী ভিত্তিক বোঝাপড়া রয়েছে তাতে লিবারেশনও আছে। দু’বছর আগে সিপিএমের ব্রিগেডে এই দীপঙ্করই ছিলেন অতিথি বক্তা। এখন আলিমুদ্দিনকে চাপে রাখতে চাইলেন তিনি। যাতে বিহার দেখিয়ে বাংলায় আসন রফা করা যায়। তবে অন্য পক্ষের মন্তব্য, বিহারে বামেদের সাফল্য দেখে যদি বাংলার বামেদের জ্ঞানচক্ষু না খোলে তাহলে বামেদের ভোট ৭ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসবে।