২০১৪ সালে প্রথম দফায় মোদী সরকারের ক্ষমতা দখলের নেপথ্যে ছিল দেশের বিভিন্ন অংশের একাধিক আঞ্চলিক দল। এরমধ্যে এমন কিছু শরিকদল বিজেপির হাতে হাত রেখেছিল, যারা কার্যত বিজেপির বহুদিনের সঙ্গী। তবে ২০১৯ এর পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টেছে। তবে তারপর সময় যত এগিয়েছে, ততই মহারাষ্ট্রের শিবসেনা থেকে কেরালা কংগ্রেস (থমাস)- এর মতো শরিক দলগুলি বিজেপির সঙ্গ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। সরে গিয়েছে পাঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল। দার্জিলিঙে পথ বদলেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এখন সম্পর্ক তিক্ত তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে-র সঙ্গে। বিজেপি কি ‘একাই একশো’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে?
প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছিল অনেক আগেই। ইদানীং তামিলনাড়ুতে শরিক দল এআইএডিএমকে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বিজেপির। আরও স্পষ্ট করে বললে, এআইএডিএমকে-র সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়েছে বিজেপি। শুক্রবার তামিলনাড়ু পুলিশ আটক করেছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি এল মুরুগানকে। কী নিয়ে সঙ্ঘাত? এক মাসের ভেত্রি ভেল যাত্রার কর্মসূচী (হাতে বল্লম নিয়ে ধর্মীয় যাত্রা) নিয়েছিল বিজেপি। শরিক দলকে এই কর্মসূচীর অনুমতি দেয়নি রাজ্যে ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে সরকার। এর জেরেই সে রাজ্যে তুমুল সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অনুমতি ছাড়াই শুক্রবার জোর করে বিতর্কিত ধর্মীয় যাত্রা শুরু করে বিজেপি। এক মাসের এই যাত্রা শেষ হওয়ার কথা ৬ ডিসেম্বর। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তির দিন। এহেন ধর্মীয় যাত্রায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া করোনা বিপর্যয়ের আবহে এমন ধর্মীয় যাত্রা বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, এই আশঙ্কায় বিজেপির ধর্মীয় যাত্রায় অনুমতি দেয়নি এআইএডিএমকে সরকার। কিন্তু তাতে কী! অনুমতি ছাড়াই পথে নেমেছিল বিজেপি সমর্থকেরা। হাতে ভেল (বল্লম) নিয়ে যাত্রার অগ্রভাগে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি এল মুরুগান। তাঁকে আটক করে তামিলনাড়ু পুলিশ।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আগামী বছরই তামিলনাড়ুতে বিধানসভা নির্বাচন। দেবতা মুরুগার নামে এই ভেত্রি ভেল যাত্রা বিশেষত হিন্দু ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখেই ঘোষণা করেছিল বিজেপি। তারা একের পর এক রাজ্য দখলের খেলায় মত্ত। কর্ণাটক ছাড়া দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে জমি নেই তাদের। তাই ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তি উদযাপনের জন্য ভেত্রি ভেল যাত্রা করে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছে। ধর্মীয় যাত্রায় সাধারণত প্রশাসন অনুমতি দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অশান্তির আশঙ্কায় রদ করেছে রাজ্য সরকার।
কিন্তু বিজেপি তাদের শরিক দল এআইএডিএমকে-কে ঝেড়ে ফেলতেও প্রস্তুত। জয়ললিতার মৃত্যুর পর দলীয় কোন্দলে দুর্বল এআইএডিএমকে। বিজেপি সেই সুযোগকে কাজে লাগতে চাইছে। ৬ ডিসেম্বর বাবরি ধ্বংসের বর্ষপূর্তি, তাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আশঙ্কায় এই যাত্রা নিষিদ্ধ করার আবেদন জমা পড়ে মাদ্রাজ আদালতে। গত বুধবার মাদ্রাজ হাইকোর্টে সরকার জানিয়েছে, বিজেপি–কে ধর্মীয় যাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এমনিতেই মারাত্মক করোনা পরিস্থিতি। তার ওপর এমন ধর্মীয় যাত্রা থেকে সংক্রমণ সুনামির চেহারা নিতে পারে। তবু জোর করে কর্মসূচী পালনে পথে নেমেছিল বিজেপি। আর তার ফলেই এবার বাড়ল শরিক দলের সঙ্গে তিক্ততা।