বাংলা সফরে এসে বাঁকুড়ার আদিবাসী বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরে যখন অমিত শাহ এই বার্তা দিতে চাইছেন, বিজেপি দলিতদের সম্মান করে, তখন হাটে হাঁড়ি ভেঙে পালটা দিল রাজ্যের শাসক দল। ঘরে ঘরে ফোন করে তৃণমূলের তরফে মনে করিয়ে দেওয়া হল হাথরসে দলিতকন্যার পরিণতির কথা!
বাঁকুড়ার চতুর্ডিহি গ্রামের ওই আদিবাসী বাড়িতে তখন সবে পাত পড়েছে স্বরাষ্টমন্ত্রীর। শুরু করেছেন খাওয়া। টিভির পর্দায় সকলের চোখ আটকে। বুঝিয়ে দিচ্ছেন দলিতদের কতটা শ্রদ্ধা করে তাঁর দল। সম্মান দেয় ঘরের লোকের মতো। ঠিক তখনই আসতে শুরু করল ফোন। ওপারের কণ্ঠ মনে করিয়ে দিল দলিত সমাজের ওপর অত্যাচার, দলিতকন্যাকে সমাজের উচ্চশ্রেণির হাতে গণধর্ষিতা এবং খুন হওয়ার পরপর ঘটনাগুলো। এক ঝটকায় ছবিগুলো চোখের সামনে আসতে শুরু করল সকলের।
বাগুইআটির এক বাসিন্দার কথায়, ‘আচমকাই ফোনটা এল। টিভিতে তখন দেখছি অমিত শাহ খাচ্ছেন। অচেনা নম্বর। হঠাৎ যেন ঝটকা লাগল। সামনে থেকে শাহের ছবি সরে গিয়ে হাথরসের ওই মেয়েটার জ্বলন্ত চিতার ছবি সামনে চলে এল।’ এই বাগুইআটির আদর্শপল্লিতেই শুক্রবার এক মতুয়া পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ করার কথা শাহের।
তবে শুধু বাগুইআটি নয়, বাঁকুড়ার বহু আদিবাসী ও অন্যান্য পরিবারের মতো অন্যান্য জেলার আরও একাধিক এলাকায় অসংখ্য পরিবারে এদিন পরপর রের্কডেড ভয়েসে এই ফোন গিয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মতুয়া, আদিবাসী-সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষের বাস। তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘অমিত শাহ যখন রাজ্যে এসে মিথ্যা দলিত-প্রীতির নাটক করবেন, আমরা সত্যিটা সকলকে মনে করিয়ে দেব।’
একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘দেশের মানুষ প্রত্যেকটা ঘটনা জানেন। হাথরসের ক্ষত এখনও তাজা। একের পর এক ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে তারপরও….। অমিত শাহের রাজ্য গুজরাটেই এমন ছবি বারবার চোখে পড়েছে। আর ওরা তো বাংলা-বিরোধী। সেটাও সম্প্রতি বিহারে দুর্গাপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রার সময় মানুষ দেখেছে। বাংলায় এসে বহিরাগতদের এই নাটক তাই কারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি।’
শুধু তাই নয়। শাসকদলের তরফে শাহের বিরোধিতায় তুলে ধরা হয়েছে একটি স্লোগান। ‘পাজল’ সমাধান করতে পারলে বোঝা যাবে স্লোগানটি। নানা অবিন্যস্ত অক্ষরের মধ্যে ফুটে রয়েছে দু’টি শব্দ, ‘বাংলা-বিরোধী’। আবার শাহের ভোজনের মুহূর্তেই টুইটারে তাঁকে কটাক্ষ করেছেন সাংসদ তথা যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা।