ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আগ্রাসন চালাচ্ছে চীনা সেনা। বিগত কয়েক মাস ধরেই এই অভিযোগ তুলে আসছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। তবে তারপরও চীনা আগ্রাসন মুখে কুলুপ এঁটে বিরোধীদের ‘দেশপ্রেম’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে মোদী সরকার। এবার করোমা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা ঘিরে তোলা প্রশ্নকেও আমজনতার লড়াইয়ের কৃতিত্ব খাটো করার চেষ্টা বলে দাগিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের অভিযোগ, সংক্রমিতের সংখ্যা আর জিডিপির সঙ্কোচন— দুই নিরিখেই ভারত বিশ্বে প্রথম সারিতে। অর্থাৎ, দীর্ঘ লকডাউনে করোনার প্রকোপে বাঁধ দেওয়া যায়নি। উল্টে আইসিইউয়ে ঢুকে পড়েছে অর্থনীতি।
তবে সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রধানমন্ত্রীর জবাব, ‘করোনার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে গিয়ে তাঁদের সেই কৃতিত্ব খাটো করেন সমালোচকেরা।’ তাঁর মতে, সরকারকে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে দেখার এই প্রবণতা আসলে এখনও কিছু জনের মধ্যে ব্রিটিশ-রাজের সময়ের মানসিকতা থেকে যাওয়ার ফসল। তাঁরা ভুলে যান যে, অতিমারির মোকাবিলায় সরকারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন ১৩০ কোটি ভারতীয়।
জনতা কার্ফু ঘোষণা থেকে শুরু করে করোনা মোকাবিলায় প্রতি পদে তাঁর সরকার যে জন-সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছে, তা মনে করিয়েছেন মোদী। বলেছেন, মাস্ক পরা থেকে শুরু করে দূরত্ব বিধি বজায় রাখা— মানুষের সহায়তা না পেলে করোনার থাবা আরও ভয়াল হতো ভারতের মতো বিশাল ও বিপুল জনঘনত্বের দেশে। কিন্তু তা বলে কোভিড মোকাবিলায় সরকারি ব্যর্থতার অভিযোগ তোলা কী ভাবে আমজনতার কৃতিত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হতে পারে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। অভিযোগ, করোনা রুখতে এবং অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে ঘোষিত যাবতীয় পদক্ষেপকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে ফলাও করে প্রচার করে কেন্দ্র।
মোদী তার খতিয়ান তুলে ধরছেন বিহারের ভোট-প্রচারে। অথচ ব্যর্থতার কথা উঠলেই, তুলছেন জন-অংশীদারির কথা! এ আসলে বিরোধীদের সমালোচনা বন্ধের কৌশল। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, শুরুতেই লকডাউনের পথে না হাঁটলে যে ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হত, তার প্রমাণ আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান। তাঁর কটাক্ষ, সমালোচকেরা সংক্রমণের মোট সংখ্যায় এমন সমস্ত দেশের সঙ্গে তুলনা টানেন, যাদের জনসংখ্যা ভারতের অনেক রাজ্যের থেকে কম। যদিও অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু দেখিয়েছেন, কোভিডে মৃত্যুর হার কম রাখার ক্ষেত্রে ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশই।
করোনা মোকাবিলায় যেভাবে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামত নিয়েছেন, মোদীর মতে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা অভূতপূর্ব। বিরোধীদের প্রশ্ন, সত্যিই তাই হয়ে থাকলে, তার পরেও রাজ্যগুলির পাওনা জিএসটির ক্ষতিপূরণ মিলছে না কেন? মোদীর কথায়, ২০ লক্ষ কোটি টাকার আত্মনির্ভর প্যাকেজে ভর করে কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। বিরোধীদের কটাক্ষ, জিডিপির পরিসংখ্যান ভুলে গেছেন মোদী। প্রথম ত্রৈমাসিকে তা সরাসরি কমেছে ২৩.৯ শতাংশ। মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ! চলতি আর্থিক বছরে ভারতীয় অর্থনীতি প্রায় ১০ শতাংশ সঙ্কুচিত হওয়ার পূর্বাভাসও মিলেছে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায়।