তারুণ্যই যে এই মুহূর্তে বিহারের রাজনীতির পরবর্তী পথ প্রদর্শক, ভোট প্রচারের সময়েই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দুই তাজা রক্ত তেজস্বী যাদব আর চিরাগ পাসোয়ানই এবার বিহার ভোটের অন্যতম কুশীলব। এবং ঘটনাচক্রে দুজনেরই ‘শত্রু’ এক জন— নীতিশ কুমার। ধারে ও ভারে তেজস্বী এগিয়ে থাকলেও, নিঃসন্দেহে বিহারের নির্বাচন জমিয়ে দিয়েছেন চিরাগ।
হাজিপুর সংলগ্ন এলাকা দীর্ঘদিনই পাসোয়ানদের গড়। এখান থেকেই চার দশক ধরে জিতে এসেছেন চিরাগের বাবা রামবিলাস পাসোয়ান। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুর পরে এখানের বাসিন্দারা বলছেন, ‘রামবিলাসের মৃত্যুতে পাসোয়ান সমাজের মাথা থেকে ছাতা সরে গিয়েছিল ভেবেছিলাম। কিন্তু চিরাগ যে পরিণতিবোধ দেখাচ্ছেন, তাতে পাসোয়ান সমাজ নতুন নেতা পেয়ে গিয়েছে। আসলে বাপ-কা-বেটা আর সিপাহি-কি-ঘোড়া— প্রভাব তো পড়বেই।’
স্থানীয় একজন বলেন, ‘নীতিশের বিরুদ্ধে যে অভদ্রতার অভিযোগ চিরাগ তুলেছেন, তাতে শুধু পাসোয়ানরা নন, অন্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষও নীতিশের ওপরে বেশ রেগে আছেন। তাছাড়া, নীতিশকে আক্রমণ করতে গিয়ে চিরাগ শালীনতার সীমা ছাড়াননি। ফলে আমজনতার সহানুভূতি পেয়েছেন তিনি।’ সকলেই একবাক্যে স্বীকার করছেন, ‘নীতীশকে অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন চিরাগ। নীতীশ সরকারের বিরুদ্ধে চিরাগ যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন, তার একটিও মিথ্যা নয়। আমজনতা তার সাক্ষী।’
ভাবমূর্তির প্রশ্নে চিরাগ যেখানে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, সেখানে তেজস্বীর জনপ্রিয়তা বেড়েছে যুবসমাজকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে। লালুপ্রসাদের অনুপস্থিতিতে প্রচারের সমস্ত আলোই এখন তেজস্বীর ওপর। বিরোধী মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তিনিই। কার্যত পারিবারিক কেন্দ্র রাঘোপুর থেকে ফের লড়ছেন তেজস্বী। মাঝে ২০১০ থেকে ২০১৫ বাদ দিলে সেই ১৯৯৫ থেকে এই আসনে কখনও জিতেছেন লালু, কখনও রাবড়ী, আর শেষ বার তেজস্বী নিজে।
সেখানের স্থানীয়রা বলছেন, ‘তেজস্বী আমাদের জাতের প্রতিনিধি। ওঁকে জেতানো আমাদের কর্তব্য। একমাত্র ও-ই ফেরাতে পারে আমাদের রাজত্ব।’ রাঘোপুরের যাদবেরাই শুধু নন, রাজপুত সমাজও এ বার নীতিশকে হারাতে এককাট্টা। তাঁদের কথায়, ‘গোটা রাজ্যের রাজপুতেরা এ বার নীতীশ তথা এনডিএ-র বিরুদ্ধে। পনেরো বছরে রাজপুত সমাজের জন্য ছিটেফোঁটা কাজ করেননি নীতিশ। প্রশাসন থেকে সরকার— সবতেই আমাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।’