বর্তমানে তিনিই বিশ্বের সেরা উইকেট রক্ষক। তিনি ‘সুপারম্যান’ সাহা। তাঁর নামের পাশে বিশেষণও প্রচুর। অথচ সেই ঋদ্ধিমান সাহাকেই বারবার দেখতে হয়েছে, তাঁকে টপকে জায়গা করে নিচ্ছেন কোনও এক বাঁ-হাতি তরুণ প্রতিভা। কারণ ঋদ্ধিমান নাকি ব্যাটিংটা ঠিক মতো করতে পারেন না। তুলনায় বাঁ-হাতি ঋষভ পন্থ নাকি তাঁর থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে!
ব্যাটিংয়ের অনেক আগে উইকেটকিপিং যেখানে দেখা হয়, সেই টেস্ট ক্রিকেট তো অনেক পরের কথা, আইপিএলের মতো মঞ্চেও যে তিনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে তা বার বার প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। যেমন গতকাল ফের প্রমাণ দিলেন দিল্লীর বিরুদ্ধে। মৃলত তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সুবাদেই দিল্লীকে উড়িয়ে দিল হায়দ্রাবাদ। এক ডজন বাউন্ডারি এবং দুই ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তাঁর ৮৭ রানের ইনিংস।
চলতি আইপিএলে এই নিয়ে মাত্র দুটো ম্যাচ খেললেন ঋদ্ধি। আর বুঝিয়ে দিলেন, ওপেনিংয়ে নামলে তিনি ঠিক কী করতে পারেন। অনেকেই হয়ত জানেন না, পাওয়ার প্লে-র প্রথম ৬ ওভারে ঋদ্ধির স্ট্রাইক রেট (১৩৭.৫) ‘ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেল (১৩৪.৯৭)-এর চেয়েও বেশি। এমনকি আইপিএলে পাওয়ার প্লে-র অন্তত ৪০০ বল খেলেছেন এমন ৪৭ ক্রিকেটারের মধ্যেও স্ট্রাইক রেটে ঋদ্ধির চেয়ে এগিয়ে আছেন মাত্র ৪ জন।
উল্লেখ্য, গতকাল পাওয়ার প্লে-তে ১০টি বল খেলেছেন ঋদ্ধি। তার মধ্যে মেরেছেন ৪টি বাউন্ডারি। নিন্দুকরা হয়ত বলবেন যে এর মধ্যে একটি বাউন্ডারি ব্যাটের কোণায় লেগে উইকেটের পাশ দিয়ে চলে যায়। কিন্তু তাতেও তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসকে খাটো করা যায় কি? আইপিএল কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত ১২২টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন ঋদ্ধি। তবু এখনও তাঁকে মাঠে নামতে হয় এই সংশয় নিয়ে যে পরের ম্যাচে সুযোগ পাবেন তো! অথচ এই আইপিএলের মতো মঞ্চেই তাঁর সেঞ্চুরি রয়েছে। রয়েছে ৭টি হাফ সেঞ্চুরি। কেরিয়ারে স্ট্রাইক রেট ১৩২.৩৪, যা অনেক বড় ব্যাটসম্যানের কাছে ভীষণ ঈর্ষণীয়।
কিন্তু এত রেকর্ডেও কিছু আসে যায় না এবং সেটা ঋদ্ধি সেটা খুব ভালমতই জানেন। স্পিন খুবই ভাল খেলেন। ক্রিকেট বইয়ের সব ধরনের সুইপ তাঁর দখলে রয়েছে। কিন্তু তিনি মঙ্গলবারও যখন ব্যাট করতে নামছেন, তখনও নিশ্চিত ভাবে জানতেন না চলতি আইপিএলে আর সুযোগ পাবেন কি না। ডু অর ডাই ম্যাচে হায়দ্রাবাদ যে ঋদ্ধিকে খেলাতে পারে, তা আগাম আঁচ করেছিল দিল্লী। কিন্তু তিনি যে একাই ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারেন, তা ভাবেননি কেউই।
এমনকি ম্যাচের শেষে দিল্লীর কোচ রিকি পন্টিংয়ের গলাতেও সেই সুরই শোনা গেল। প্রাক্তন অজি ক্যাপ্টেন বললেন, “সাহা আমাদের অবাক করেছে। ও যে দুর্দান্ত ক্রিকেটার তা নিয়ে আমাদের সংশয় ছিল না। কিন্তু এত দিন পর খেলতে নেমে ও যে ইনিংস খেলেছে তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।” এর থেকে বড় প্রশংসা আর কিই বা হতে পারত! কিন্তু ঋদ্ধি বরাবরের মতই নির্বিকার। তাই ম্যাচের সেরার পুরস্কার হাতে নিয়েও তিনি বলতে পারেন, “যা করেছি দলের জন্যই।”