বরণের পরে পাড়ার এয়োস্ত্রীরা পরস্পরকে সিঁদুর মাখাচ্ছেন। পাড়ার কাকিমা-বৌদিরা একটা গোটা বছর ভালো করে কাটানোর প্রার্থনা করছেন মায়ের কাছে। বছর ঘোরার পর পুজো এল ঠিকই, কিন্তু মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে প্রথমে নিষিদ্ধ হল সিঁদুরখেলার চিরাচরিত আয়োজন। তার পরে মণ্ডপে ঢোকার উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে আদালতের রায়ে। এবছর আর দেখা যাবে না সিঁদূর খেলার সেই মনোরম দৃশ্য।
দুর্গাপুজোর অঞ্জলিকে সংস্কৃতির ঘনিষ্ঠ অঙ্গ হিসেবে দেখছেন পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। বলছেন, ‘পুরজন একসঙ্গে জমা হয়ে অঞ্জলি দেওয়ার মধ্যে একাত্মবোধ রয়েছে। এ বছর পরিস্থিতির চাপে পড়ে অঞ্জলি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার খুবই খারাপ লাগছে।’
পুজোমণ্ডপে অঞ্জলি বন্ধ থাকায় মনখারাপ নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদারেরও- ‘সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়। অঞ্জলির সময়টা আমরা সবাই একসঙ্গে দেবীর আশির্বাদ নিই। কিন্তু এবার তো কিছু করার নেই। সবার ভালোর জন্য কিছু তো ছাড়তেই হয়। সামনের বছরের অপেক্ষায় রইলাম।
অঞ্জলি শেষ হতেই কানের কাছে, ‘দেখ আবার কিন্তু পাশাপাশি’ শুনেই চমকে পিছন ফিরেছিলেন বাচিকশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই দু’জনের হাসি। ব্রততী বলছেন, ‘বেশ কয়েক বছর পাশাপাশি বেঞ্চে বসে কেটেছে স্কুলজীবন। সেই বন্ধু প্রতিবেশী হয়ে একই পাড়ায়। দেখা হয়েছিল অষ্টমীতে।’ ব্রততী বলছেন, ‘হারিয়ে যাওয়া কত বন্ধুর সঙ্গে যে পুজোর মণ্ডপ দেখা করিয়ে দিয়েছে বলে শেষ হয় না। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু অধ্যাপকের সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছে এই পুজোর মণ্ডপেই।’ পুজোর সময় ব্রততীরও সাধারণত কলকাতায় থাকা হয় না। নানা অনুষ্ঠানে বেরিয়ে পড়েন বাইরে। এ বছর কলকাতায় রয়েছেন। কিন্তু ‘অপরিচিত’ কেউ পিছন থেকে টোকা দিয়ে কি রে, চিনতে পারছিস?’ বলে চমকে দেওয়ার মজাটা এবার বাদই থেকে যাবে- এটাই আফসোস।