প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০১৯–২০ আই লিগ ট্রফি উঠল মোহনবাগান কর্তাদের হাতে। বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেলে আই লিগ সিইও সুনন্দ ধরের উপস্থিতিতে মোহনবাগানের হাতে ট্রফি তুলে দিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এবং মোহনবাগানের শীর্ষকর্তারা। ছিলেন ক্লাব সভাপতি টুটু বসু।
বাইপাস সন্নিহিত পাঁচতারা হোটেলে সাজো সাজো রব। বাইরের রাস্তায় সবুজ-মেরুন বেলুন, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার দিয়ে সাজানো সারি সারি গাড়ি। সেই লাইন ছাড়িয়ে গিয়েছে স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেট। শোভাযাত্রার অপেক্ষা। তবে হোটেলের হলঘরের অনুষ্ঠান মঞ্চ যেন কিছুটা ছন্দহীন। আসলে ২০১৯-২০ আই লিগে সাফল্যের ইমারত গড়ার কারিগর মোহন বাগান কোচ ও ফুটবলাররাই যে অনুপস্থিত! কোভিড তাল কেটে দিয়েছে সবকিছু। বিশাল স্ক্রিনে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কিবু, ফ্রান গঞ্জালেজ, বেইতিয়ারা পুরানো দলকে শুভেচ্ছা জানালেন বটে, তবে সেটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটার মতো ব্যাপার। যে অভাব কলকাতায় থাকা সহকারি কোচ রঞ্জন চৌধুরি, ধনচন্দ্র সিং, কিয়ান নাসিরির মতো চ্যাম্পিয়ন দলের দু’একজন ফুটবলারকে দিয়ে পূরণ হওয়ার নয়।
মোহন বাগানের আই লিগ জয় নিশ্চিত হয়েছিল গত ১০ মার্চ। চার ম্যাচ বাকি থাকতেই। মহামারীর ছোবলে লিগ শেষ করতে পারেনি এআইএফএফ। এই পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতা স্থগিতের সময় পয়েন্টের ব্যবধানে অনেকটা এগিয়ে থাকার পুরস্কার পেয়েছে কিবু ভিকুনার দল। ঘোষিত হয়েছে বিজয়ী। তারপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। আট মাসের মাথায় সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ফেসবুক পেজে আই লিগ জয়ীদের শুভেচ্ছা জানান। মোহন বাগান অনুরাগী সুমন্ত চক্রবর্তীর গাওয়া ‘চ্যাম্পিয়ন্স সং’ দিয়ে এদিন অনুষ্ঠান শুরু হয়। তারপর অতিথি বরণের পালা। পাশাপাশি ক্লাব সভাপতি উন্মোচন করেন ‘চ্যাম্পিয়ন্স প্লাক’। যাতে খোদাই ছিল ৩টি জাতীয় লিগ ও ২টি আই লিগ-সহ দলের দুশোর উপর ট্রফি জয়ের পরিসংখ্যান। ভিডিও ক্লিপিংসে দেখানো হয়, অতীত সাফল্যের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্ত। বাইরে তখন অপেক্ষারত সবুজ-মেরুন জনতা। অনুষ্ঠান পুরো শেষ হতে না হতেই ট্রফি চলে আসে সুসজ্জিত গাড়ির মধ্যে থাকা কাঁচের ক্যাবিনেটে। শোভাযাত্রা যত এগিয়েছে. ততই বেড়েছে ভিড়ের বহর। মোহন বাগানের বিভিন্ন ফ্যান ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে উল্টোডাঙ্গা মোড়, হেদুয়া পার্কের কাছে তৈরি হয় মঞ্চ। উত্তর কলকাতার কিছুটা অংশ ঘুরে মধ্য কলকাতা হয়ে ময়দানের মোহন বাগান তাঁবুতে পৌঁছয় ট্রফি। কলকাতার চারটি পয়েন্ট থেকে আকাশে উড়তে দেখা যায় সবুজ-মেরুন বেলুন। সন্ধ্যায় হাওড়া ব্রিজ সেজে ওঠে সবুজ-মেরুন আলোক ঝর্ণায়। পাড়ার মোড়ে মোড়ে মোহন বাগান প্রেমীদের জনবিস্ফোরণ ছিল অবাক করার মত। পরোয়া ছিল না করোনা বিধিরও। মাস্ক ব্যবহার কিংবা সামাজিক দূরত্বরক্ষার অভ্যাস ভুলে কল্লোলিনী কলকাতা অন্তত একদিনের জন্য সবুজ-মেরুন আবেগের জোয়ারে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। এটাই চিরাচরিত কলকাতার ফুটবল উন্মাদনা, যার কাছে কখনও কখনও হার মানে ভয়ডর, বিজ্ঞান, যুক্তিও।