নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ আসলে বিজেপির আর পাঁচটা ‘ভাঁওতাবাজি’র মতোই একটি। তাই বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হিন্দুদের মন জয় করতে সংসদে আইনটি পাশ করিয়েও রুলস বা বিধি তৈরিতে চূড়ান্ত ঢিলেমি দিচ্ছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ আসামের বাঙালিদের একটা বড় অংশের। এরই মধ্যে ভোটের আগে অসমিয়া আধিপত্যবাদীদের মন পেতে বাঙালিদের দুর্ভোগ আরও বাড়াতে মরিয়া বিজেপি। এনআরসি নিয়ে নতুন ফতোয়া জারি হতেই পুজোর আগে আসামের বাঙালিদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এনআরসির তালিকাভুক্তরাও এখন নতুন করে নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। তাঁদের অভিযোগ, ক্যা নিয়ে হিন্দু বাঙালিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বিজেপি। কারণ হিন্দু–হিন্দি–হিন্দুস্থান নীতির প্রবর্তক বিজেপি বাঙালি–বিদ্বেষী।
প্রসঙ্গত, যত দিন যাচ্ছে, এনআরসি নিয়ে আসাম সরকারের দ্বিচারিতা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা গত বছর প্রকাশিত এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা মানেন না। নতুন করে যাচাই করতে হবে তালিকাভুক্তদের নাম। আবার বিজেপির শাসনেই এনআরসির রাজ্য সমন্বয়ক হিতেশ দেবশর্মা রাজ্যের প্রত্যেক জেলাশাসক তথা জেলা নাগরিকত্ব পঞ্জীকরণ অধিকর্তাকে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছেন, ভোটার–তালিকায় সন্দেহভাজন, ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত বা প্রমাণিত বিদেশিদের নাম এনআরসি তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত এনআরসি তালিকা নিয়ে এ ধরনের সরকারি নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়েছে। পুজোর আগে বাঙালিদের সর্বনাশ করে অসমিয়া ভোট পেতে বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
উল্লেখ্য, গত বছর প্রকাশিত এনআরসি তালিকায় ১৯ লাখেরও বেশি মানুষের নাম বাদ যায়। বাদ পড়াদের বেশির ভাগই হিন্দু বাঙালি। তাঁদের মন জিততে তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাশ করায় মোদী সরকার। কিন্তু সেই আইন আজও কার্যকর করা হয়নি। এই অবস্থায় ভোটের আগে ফের ঝোলা থেকে বেড়িয়ে আসছে বাঙালি–বিদ্বেষ। এনআরসি সমন্বয়কের পাঠানো নির্দেশের কড়া সমালোচনা করেছে সিআরপিসিসি। সংস্থার চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে প্রকাশিত এনআরসি তালিকা থেকে নতুন করে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা আইনশাস্ত্র–বিরোধী। তা ছাড়া কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারি কর্মীদের দিয়েই তো তৈরি হয়েছে তালিকা। এই তালিকা যাচাইয়ের নামেও মানুষকে প্রচুর হয়রানি করা হয়েছে। এখন নতুন করে নাম বাদ দেওয়া বিদ্বেষের রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু নয়।’