চীন ইস্যু নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরেই ল্যাজেগোবরে অবস্থা মোদী সরকারের। কোনও মতেই চীনকে বাগে আনা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে। এর কারণ মূলত একটাই। আলোচনা ও আগ্রাসন দু’টোই কার্যত এক সঙ্গে চালায় চীন। সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যেই যেমন পূর্ব লাদাখে নজিরবিহীন ভাবে গুলি চালিয়েছে চীনা বাহিনী। ফলে বেজিংকে নিয়ে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সেই দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘আলোচনা চলছে। কিন্তু চীনকে নিয়ে আগাম কোনও মন্তব্য করা যাবে না।’ আলোচনার বিষয়বস্তু ‘গোপনীয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৪ জুন গালওয়ান উপত্যকায় সেনা সংঘর্ষের পর সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার পর পূর্ব লাদাখে স্থিতাবস্থা ফেরাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) থেকে সেনা সরাতে একমত হয়েছিল নয়াদিল্লী-বেজিং। সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছিল। কিন্তু আলোচনার প্রক্রিয়ার মধ্যেই ৩০ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় কয়েক বার গুলি চালিয়েছে চীনা বাহিনী। মস্কোয় ভারত-চীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তরের বৈঠকেও সমঝোতার বার্তা ছিল। তারপরেও লাদাখ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। ভারতও তার জবাব দিয়েছে।
এই পরিস্থতিতে বুধবার সপ্তম দফা সামরিক স্তরে বৈঠক হয়েছে। পরের দিন ব্লুমবার্গ ইন্ডিয়া ইকনমিক ফোরামে বুধবারের বৈঠক নিয়ে মন্তব্যই করতে চাইলেন না জয়শঙ্কর। বিদেশমন্ত্রী শুধু বলেন, ‘আলোচনা চলছে। ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস। আমার প্রথম নীতি হল, যেটা এখনও চলছে, তা নিয়ে আগাম মন্তব্য না করা।’ তার পরেও এ নিয়ে জোরাজুরি করায় তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লী ও বেজিংয়ের মধ্যে এমন কিছু আলোচনা চলছে, যা গোপনীয়। দেখা যাক, এটা কীভাবে কাজ করে।’
সীমান্তে আগ্রাসনের পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই লাদাখ নিয়ে গরম গরম বিবৃতি দিতেও অভ্যস্ত বেজিং। গত বছরের আগস্টে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে সেই অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করেছে নয়াদিল্লী। সেই পদক্ষেপে গোড়া থেকেই আপত্তি তুলেছে শি জিনপিং সরকার। কয়েক দিন আগে তারা আবার দাবি করেছে, ‘লাদাখকে বেআইনি ভাবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করেছে ভারত।’
পাল্টা নয়াদিল্লীও জানিয়ে দিয়েছে, ‘লাদাখ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল আছে এবং থাকবে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনের মতপ্রকাশের কোনও অধিকার নেই।’ সূতরাং আলোচনায় বোঝাপড়া বা ঐকমত্যে পৌঁছলেই যে চীনের উস্কানিমূলক বিবৃতি বা আগ্রাসন থেমে যাবে, বেজিংয়ের ওপর তেমন আস্থা ভারতের নেই। এমনকি, দ্বিপাক্ষিক স্তরে আলোচনা প্রক্রিয়ার মধ্যেও যে পরিস্থিতি ফের বিগড়োতে পারে, নয়াদিল্লী তা বিলক্ষণ জানে।