দেশবাসীর কাছে তিনি ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তাঁকে সেই অবতারে দেখতে অভ্যস্ত দেশবাসী। ভোট প্রচারে বেরিয়ে সেবার তিনি ফেরি করেছিলেন বছরে দু’কোটি কাজের সুযোগ তৈরির স্বপ্ন। দেশবাসীর কাছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউপিএ সরকারের প্রায় শেষ বেলা (২০১১-১২) থেকে তাঁর প্রথম দফার শেষ দিকের (২০১৮-১৯) মধ্যেই শহরে অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে বেকারত্বের হার। গ্রামে প্রায় তিন গুণ। আর করোনা আর লকডাউনে বহু কর্মী কাজ খোয়ানোর পরে এই ফারাক এখন আরও চওড়া হওয়ার আশঙ্কা সাম্প্রতিক বেসরকারি পরিসংখ্যানে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের আগে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে ভোট-প্রচারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে কার্যত তুলোধোনা করতেন নরেন্দ্র মোদী। নিয়ম করে প্রায় প্রতি জনসভায় দাবি করতেন, ইউপিএ সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব এবং দুর্নীতির কারণেই ৮ শতাংশ ছুঁতে পারছে না বৃদ্ধির হার। ইঙ্গিত দিতেন, তিনি হাল ধরলে, মুখ তুলবে অর্থনীতি। সেই সঙ্গে, স্বপ্ন দেখাতেন ফি বছর দু’কোটি নতুন চাকরিরও। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালে গ্রামে প্রতি হাজার জনে কর্মহীন ছিলেন ১৭ জন। শহরে ৩৪। সেখানে ২০১৮-১৯ সালে তা হয়েছে যথাক্রমে ৫০ এবং ৭৭ জন! গ্রাম-শহর অথবা পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে লাফিয়ে বেড়েছে বেকারত্ব।
বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী যে তাঁর জমানায় তা হলে এত দেশি-বিদেশি লগ্নী আসার কথা বলেন, দাবি করেন অর্থনীতির প্রগতির, কাজের বাজারে তার প্রতিফলন কোথায়? জাতীয় নমুনা সমীক্ষার (এনএসএসও) তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৭-১৮ কিংবা ২০১৮-১৯ সালে বেকারত্বের চড়া হারের খবর নতুন নয়। কিন্তু সেই তথ্যের ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সঙ্কলিত পরিসংখ্যান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হল, বৃদ্ধির হারের মতো কাজের সুযোগ তৈরিতেও মনমোহন জমানার থেকে বহু যোজন পিছিয়ে মোদী সরকার। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মোদী জমানায় কাজের বাজারের এমন করুণ ছবির অন্যতম কারণ নোটবন্দী আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর দীর্ঘ মেয়াদি ধাক্কা। তাঁদের ধারণা, ওই ছবিকে আরও বিবর্ণ দেখাত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ধরা হলে।