‘কন্যাশ্রী’র পর ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্প দিয়ে আরও একবার বিশ্বজয় করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯-২০-র শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লুএসআইএস)-এর থেকে সেরার শিরোপা পায় রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য করা মমতার এই সাধের প্রকল্প। সামনের শিক্ষাবর্ষে এই ‘সবুজ সাথী’-ই পা দিচ্ছে কোটির ঘরে।
২০১৫-১৬ সালের শিক্ষাবর্ষে ওই প্রকল্পের সূচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর জঙ্গলমহলের গোপীবল্লভপুরে গিয়ে প্রথমবার ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল দেন। তিনি এই প্রকল্পের নাম দেন ‘সবুজ সাথী’। কারণ সাইকেল পরিবেশ বান্ধব যান। ২০১৫ সাল থেকে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে সাইকেল দেওয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। এখনও পর্যন্ত ৮২ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এই প্রকল্পে সাইকেল পেয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাপকদের সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
রাজ্য সরকার স্থির করেছিল, প্রথম দু’বছরে ৪০ লক্ষ সাইকেল দেওয়া হবে। ক্লাস এইটের পরে অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। তারা যাতে স্কুলছুট না হয়, সেজন্য সাইকেল দেওয়া শুরু হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই স্কুলছুটের সংখ্যা কমানোর ওপরে জোর দিয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দূর করাও তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য। সেজন্য ‘কন্যাশ্রী’, মিড–ডে মিল ইত্যাদি প্রকল্প চালু করা হয়েছিল আগেই। ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের লক্ষ্যও তাই।
রাজ্য সমীক্ষা করে দেখেছিল, মেয়েরা অনেক সময় বাড়ি থেকে স্কুল দূরে অবস্থিত হওয়ার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। তাদের অনেকের বিয়েও হয়ে যায়। ছেলেরা অনেকে স্কুল ছেড়ে কোনও কাজে লেগে যায়। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ক্লাস এইটে যদি ২০ লক্ষ ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে, স্নাতক স্তরে গিয়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় তিন লক্ষে। বাকি ১৭ লক্ষ তার আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। তাদের মধ্যে অর্ধেক মেয়ে আর অর্ধেক ছেলে।
এখন ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে সাইকেল দেওয়ার ফলে মেয়েরা দূরের স্কুলে যেতে পারছে সহজে। হাইস্কুলে যাওয়ার জন্য তাদের আগ্রহ বাড়ছে। বাড়ির অন্যান্য কাজেও তারা সাইকেল ব্যবহার করেছে। গ্রামাঞ্চলে পরিবহণ ব্যবস্থার সমাধান হয়েছে অনেকাংশে। আবার ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সংস্থা প্রতীচীকে দিয়ে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্প নিয়ে যে সমীক্ষা করায় রাজ্য সরকার, তাতেও দেখা যায়, মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার হার বেড়েছে ছয়-সাত শতাংশ। ২০১৯-২০ সালে সেই হার আরও বেড়েছে।
শুধু তাই নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করায় ২০১৭-১৮ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে ‘সবুজ সাথী’। পশ্চিমবঙ্গের এই মডেল অনুসরণ করছে অন্যান্য রাজ্য। তার মধ্যে আছে তামিলনাড়ু, রাজস্থান, বিহার এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতও। মমতার স্বপ্নের ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের তৎকালীন সচিব সঞ্জয় থাডি। এখনও তিনি প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছেন। সাহায্য করছেন দফতরের আধিকারিকরা।