গোটা বিশ্বে ভয়ঙ্কর করোনা সংক্রমণের মধ্যেই এবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করল সুইডেনের নোবেল অ্যাসেম্বলি ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট। এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম দিক ছিল হেপাটাইটিস প্রতিরোধ। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য নোবেল জিতলেন তিন বিজ্ঞানী হার্ভে জে অল্টার, মাইকেল হাউটন ও চার্লস এম রাইস।
করোনা অতিমহামারীর মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল ঘোষণা এ বছর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বিশ্বজুড়েই গবেষণা চলছে। বিশেষত হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি নামক লিভারের দুই সংক্রমণজনিত রোগ নিয়েই সারা বিশ্ব তোলপাড়। কারণ এই দুই হেপাটাইটিসের প্রকোপে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
হেপাটাইটিস সি হওয়া মানেই যে সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়, তারও যে ওষুধ রয়েছে এবং সেই ওষুধ ক্রমশ নাগালের মধ্যে আসতে চলেছে সে নিয়ে বিশ্বজুড়েই ক্যাম্পেন চলছে। চিকিৎসকরা বলেন, এখনও পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি-র যে ওষুধ পাওয়া যায় তাতে বড়জোর ৫০ শতাংশ রোগী সুস্থ হন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বহু রোগীকে ওই ওষুধ দেওয়াও যায় না। তাই হেপাটাইটিস সি নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে অনেকের মনেই।
হার্ভে জে অল্টার, মাইকেল হিউটন ও চার্লস এম রাইসের অবদান হল তাঁরা হেপাটাইটিস সি ভাইরাস চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এই ভাইরাসের আকার ৫৫-৬৫ ন্যানোমিটার। পজিটিভ-সেন্স সিঙ্গল স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ ভাইরাস। ফ্ল্যাভিরিডি পরিবারের এই ভাইরাস হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমার জন্য দায়ী।
প্রসঙ্গত, হার্ভে জে অল্টার মার্কিন ভাইরোলজিস্ট। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের ওয়ারেন গ্র্যান্ট ম্যাগনুসন ক্লিনিকাল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান। হেপাটাইটিস এ ও হেপাটাইটিস বি নিয়েও তাঁর গবেষণা রয়েছে। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি অল্টার তাঁর গবেষণায় দাবি করেছিলেন, হেপাটাইটিস শুধুমাত্র এ ও বি ভাইরাস দ্বারাই বাহিত হয় না। তখন তাঁর গবেষণায় বলেছিলেন নন-এ ও নন-বি হেপাটাইসিসের ট্রান্সমিশনও হয়। পরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস চিহ্নিত করেন তিনি।
মাইকেল হাউটন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। ১৯৮৯ সালে কুই-লিম চু, জর্জ কুও এবং ড্যানিয়েল ব্র্যাডলের সঙ্গে যৌথভাবে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস চিহ্নিত করেছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস আবিষ্কারেও অবদান আছে তাঁর। কানাডা এক্সিলেন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান হাউটন। তিনি লি কা সিং ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটেরও ডিরেক্টরের পদে রয়েছেন। ২০০৯ সালে হেপডার্ট লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে, চার্লস এম রাইস আমেরিকান ভাইরোলজিস্ট। বর্তমানে তিনি রকেফেলার ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণা করেন। ২০০২ ও ২০০৩ সালে আমেরিকান সোসাইটি ফর ভাইরোলজির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সিনবিস ভাইরাস নিয়েই মূলত তাঁর গবেষণা ছিল। ফ্ল্যাভিভাইরাস পরিবারের সদস্যদের চিহ্নিত করতে শুরু করেন চার্লস। পরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস শনাক্ত করেন তিনি।