টানা ১৫ দিনের লড়াইয়ের পরেও শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার দিল্লীর সফদরজঙ্গ হাসপাতালে জীবনের লড়াই থেমে গিয়েছিল হাথরসের নির্যাতিতার। পরিবারের শেষ ইচ্ছা ছিল একটাই, বাড়ির মেয়ের শেষকৃত্যটা যে বিধি মেনে হয়। কিন্তু সেটাও হয়নি। পরিবারের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও জোর করে বাড়ি থেকে কিছু দূরের এক গমক্ষেতে নির্যাতিতার দেহ দাহ করে বিশাল পুলিশবাহিনী। রাতের অন্ধকারে তাঁর মুখটা শেষ বারের মতো ভাল করে দেখতেও পাননি কেউ। তবে তারপর থেকেই বারবার পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তাদের মুখ দেখতে পারছেন নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা। ধেয়ে আসছে তাঁদের দিক নানা হুমকি।
‘এখনও সময় আছে। ভেবে দেখুন। আপনার মেয়ে যদি করোনায় মারা যেত, তাহলে কি ক্ষতিপূরণ পেতেন! এই মুহূর্তে যা পাচ্ছেন নিয়ে নিন। এরপর হয়তো এটাও পাবেন না।’ স্বয়ং জেলাশাসক এসে বারবার এই কথাগুলোই বলে যাচ্ছেন হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনকে। কখনও আবার প্রশাসনের তরফে পাঠানো হচ্ছে অন্য কাউকে। সে এসে বলছে, ‘আমিও দলিত। এখন যা হচ্ছে সব ঠিকঠাক হচ্ছে। যা পাচ্ছো চুপচাপ নিয়ে নাও। পরে আর কিছুই পাবে না। মিডিয়ার সামনে বলে দাও, সব ঠিকই চলছে। এখন সব ঠিক আছে। আর কোনও অসুবিধা নেই।’
কিন্তু হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনের দাবি, ক্ষতিপূরণ চাই না। বাড়ির মেয়ের মৃত্যুর জন্য ন্যায় বিচার চাই। মেয়েকে যারা নৃশংসভাবে খুন করেছে তাদের শাস্তি চাই। নির্যাতিতার ভাই দাবি করেছেন, পুলিশ প্রশাসন তাঁদের ঘরবন্দী করে রেখেছে। এমনকী পরিবারের সদস্যদের বাথরুম যেতে হলেও পুলিশের অনুমতি নিতে হচ্ছে। ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলার কোনও প্রশ্নই নেই। সারাদিন নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে তাঁদের।
প্রশ্ন উঠছে, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসন কি বড় কোনো তথ্য লুকানোর চেষ্টা করছে! ইতিমধ্যে হাথরসের জেলাশাসকের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, জেলাশাসক নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনকে বয়ান বদলের জন্য চাপ দিচ্ছেন। যদিও ১৯ বছর বয়সী নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন কোনোভাবেই বয়ান বদল করতে রাজি নয়। তাঁরা এই ঘটনার শেষ দেখতে চান। তবে এভাবে পুলিস ও প্রশাসনিক কর্তাদের সাঁড়াশি চাপের মুখে কতক্ষণ তাঁরা রুখে দাঁড়াতে পারবেন, সেটাই এখন সবথেকে বড় কথা!
নির্যাতিতার বৌদি বলেছেন, ‘আমরা পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন আপনারা রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে আমাদের মেয়ের দেহ সৎকার করলেন! পুলিশ কোনও উত্তর দেয়নি। একই প্রশ্ন জেলাশাসককে করায় উনি বলেন, তোমরা ময়নাতদন্তের মানে জান? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তোমরা হাতে নিয়ে কী করবে! তোমরা তো পড়াশোনা জানো না। আর ময়নাতদন্ত করার সময় হাতুড়ি দিয়ে মৃতদেহের মাথার খুলি ফাটানো হয়। বুক থেকে পেট পর্যন্ত কেটে দেওয়া হয়। তোমাদের মেয়ের মৃতদেহের অবস্থা ভাল ছিল না। সেটা দেখলে তোমরা আঁতকে উঠতে। তাই তা তোমাদের দেখাইনি।’ নির্যাতিতার পরিবার অবশ্য এমন ঠুনকো দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, জেলাশাসকের নিজের মেয়ের সঙ্গে যদি এমন হত তা হলেও তিনি এসব কথা বলতে পারতেন তো!