টানা ১৫ দিনের লড়াইয়ের পরেও শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার দিল্লীর সফদরজঙ্গ হাসপাতালে জীবনের লড়াই থেমে গিয়েছিল তাঁর। তখনও নির্মম মৃত্যুর সামনে অসহায় ছিলেন সন্তানহারারা। বুক নিঙড়ে ওঠা কান্না চোখ দিয়ে ঝরেছিল শুধু। শেষ ইচ্ছা ছিল একটাই, মেয়েটার শেষকৃত্য বিধি মেনে করবেন। কিন্তু সেটাও হল না। ভোর অবধি অপেক্ষাই করতে পারল না পুলিশ। রাত তখন প্রায় দেড়টা। গোটা গ্রাম জুড়ে তীব্র আর্তনাত আর শব্দের কান্নার মধ্যেই বিশাল পুলিশবাহিনী দিয়ে ঘিরে রাখা গণধর্ষিতা তরুণীর বাড়ির ভেতর থেকে তাঁর মৃতদেহ বের করে আনে কয়েকজন। পুলিশ কর্মীদের বাধা দিতে গিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে আছাড়ি পিছাড়ি খেয়েও আটকাতে পারেন না তরুণীর মা। উল্টে টেনে হিঁচড়ে তরুণীর পরিবারের লোকজনকে একে একে ঘরে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশকর্মীরা। বাইরে থেকে ঘরের তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে কেউ বাইরে বেরিয়ে বাধা দিতে না পারেন। এরপরেই দিল্লী থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে উত্তপ্রদেশের হাথরস গ্রামে এক ভয়ঙ্কর কর্মযজ্ঞে মেতে ওঠে যোগীর পুলিশ।
হ্যাঁ, ঠিক এভাবেই হাথরসের গণধর্ষিতা তরুণীকে গতকাল রাতে দাহ করা হয়। একরকম জোর করেই। শ্মশানে নয়, নির্যাতিতার দেহ পোড়ানো হয়েছে বাড়ি থেকে কিছু দূরে এক গমের ক্ষেতে। রাতের আঁধারে ক্ষেতের মাঝে দাউদাউ আগুনে পুড়ে গেছে ১৯ বছরের মেয়েটার দেহ। তরুণীর বাবা, দাদা থেকে আত্মীয়-পরিজন এমনকি গ্রামের মানুষজনের প্রতিবাদ, আন্দোলনের মাঝেই পুলিশ তার কাজ শেষ করেছে। রাত আড়াইটে নাগাদ নির্যাতিতার দেহ দাহ করা হয়েছে পরিবারের উপস্থিতি ছাড়াই। তরুণীর বাবা বলেন, ‘সে ছিল এক ভয়ঙ্কর রাত। মেয়েটাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দিল।’ সন্তানহারা বাবার বিলাপ, ‘আমরা বলেছিলাম হিন্দু রীতি মেনে সকালেই মেয়ের শেষকৃত্য করব। কিন্তু পুলিশ শুনল না। কেন এত তাড়াহুড়ো করল বুঝতে পারছি না। মেয়ের মুখটা শেষবারের মতো দেখতেও পারলাম না।’ নির্যাতিতার দাদা বলেন, সকলকে টেনে ঘরে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ, কেউ বাধা দিতে পারেনি। পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরে ধরে শেষবারের মতো চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ কোনও কথাই শোনেনি, দাবি তাঁর।