কথা ছিল, অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল খনি থেকে কয়লা তুলে জাহাজে করে তা সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হবে উড়িষ্যার ধামরা বন্দরে। সেখান থেকে মালগাড়িতে তুলে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর সেই মালগাড়ির জন্য বসাতে হবে ডবল লাইন। কিন্তু প্রায় ৭০০ পরিবারের উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় আগেই বেঁকে বসেছিল রউরকেল্লা স্টিল টাউনশিপ থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উড়িষ্যার সুন্দরগড় জেলার বিসরা-বীরকেরা তালুকের বারহা বানস গ্রামের বাসিন্দারা। মোদী ঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরবিচ্ছিন্ন কয়লা পৌঁছে দিতে ডবল লাইনের বিরোধিতা করে সেখানকার ২০ হাজার আদিবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আদিবাসীদের নেতা ডেমে ওরাম জানিয়ে দিয়েছেন আর উচ্ছেদ হবেন না। এবার অস্ট্রেলিয়ায় যে কারমাইকেল খনি থেকে কয়লা তুলে তা আনার এত বড়ো উদ্যোগ, এবার সেখানেও বিপত্তি।
জানা গিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল ক্যুইন্সল্যান্ড সরকার গত বছরই ওই এলাকার ১,৩৮৫ হেক্টর জমি শিল্পে ব্যবহারের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এলাকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় ওয়াঙ্গান জাগালিঙ্গৌয়ের (ডব্লিউ অ্যান্ড জে) দীর্ঘদিনের অভিযোগ, আর্থিক স্বার্থ দেখতে গিয়ে সরকার আদি বাসিন্দাদের অধিকার নিয়ে ছেলেখেলা করছে। গত বছরের সরকারি বিজ্ঞপ্তি সেই আগুনে ঘি ঢালে। এদিকে সরকারি সুবিধা হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠী কারমাইকেল কয়লা খনি কিনে ফেলে। শুরু হয়ে যায় উৎপাদন শুরুর তোড়জোড়। ওয়াঙ্গান জাগালিঙ্গৌদের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, আদানি গোষ্ঠী প্রকৃতি নিধনের সমস্ত যজ্ঞ সম্পন্ন করে ফেলেছে। সরকার তাতে নহবত খানার দায়িত্বে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা ওই এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের একমাত্র সম্পদ প্রকৃতিকে তাঁদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। পথে নেমে প্রতিবাদের পাশাপাশি আদানি গোষ্ঠীর খনির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়াতেও গত ৪ বছর ধরে জনমত সংগ্রহ করছেন ওয়াঙ্গান জাগালিঙ্গৌরা। আর সম্প্রতি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নিয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২৪ আগস্ট আদানি গোষ্ঠীর কারমাইকেল খনির সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারী ওয়াঙ্গান জাগালিঙ্গৌরা। খনিতে যাওয়ার প্রধান সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কারমাইকেল কয়লা খনি। ক্যুইন্সল্যান্ড সরকারের অধিগ্রহণ না মেনে ওয়াঙ্গান জাগালিঙ্গৌরা বলছেন, এই এলাকার গাছ, মাটি, নদী, জলাশয়, আকাশের অধিকার এখানকার আদি বাসিন্দাদের। সরকার বাণিজ্যিক স্বার্থে তা খনি কোম্পানি আদানির হাতে তুলে দিতে পারে না।