গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল রাফাল ইস্যু। এবার ফের নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করল রাফাল চুক্তি। বুধবার সংসদে পেশ করা রিপোর্টে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল জানায় যে চুক্তির শর্ত মেনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-কে প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করছে না রাফাল নির্মাণকারী ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন এবং এমবিডিএ। রাফাল ফাইটার জেট নির্মাতা সংস্থা ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছিল ভারতের। তার মধ্যে প্রথম দফায় পাঁচটি রাফাল চলে এসেছে দেশে। কিন্তু রাফাল নির্মাতা দাসো চুক্তির শর্ত পুরোপুরি পালন করেনি বলে অভিযোগ সিএজি-র।
বুধবার সংসদে পেশ করা রিপোর্টে সিএজি বলেছে, ২০১৫ সালে ৩৬ টি রাফাল কেনার প্রস্তাব দেওয়ার সময় দাসো বলেছিল তাদের উন্নত প্রযুক্তির ৩০ শতাংশ তারা ডিআরডিও-র হাতে তুলে দেবে। যুদ্ধান্ত্র তৈরির প্রযুক্তি, উন্নত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়ে নানা সময় ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থাকে সাহায্য করবে। কিন্তু রাফাল চুক্তির পরে তাদের আর সেই দায়বদ্ধতা দেখা যাচ্ছে না। ডিআরডিও হালকা ওজনের যুদ্ধবিমানের জন্য কাবেরী নামক ইঞ্জিন তৈরি করতে এই প্রযুক্তিগত সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু দাসো এই প্রযুক্তিগত সাহায্য দেয়নি এবং কবে নাগাদ এই সাহায্য পাওয়া যাবে তাও এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।
সিএজি-র মতে, সব বিদেশি সংস্থাই চুক্তি করার সময় নানা রকম প্রস্তাব দিয়ে থাকে। দেশীয় সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার আগে তাদের প্রযুক্তি ও উন্নত সংস্করণ নিয়ে নানারকম আলোচনা করে। কিন্তু একবার চুক্তি হয়ে গেলে তারা আর সে বিষয়ে বিশেষ দায়বদ্ধতা দেখায় না। দাসো অ্যাভিয়েশনও সেই পথেই হাঁটছে বলে অভিযোগ সিএজি-র। ডিআরডিও তাদের তৈরি লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টের জন্য কাবেরী ইঞ্জিন তৈরির ব্যাপারে প্রযুক্তিগত সাহায্য চেয়েছিল দাসোর কাছে। কিন্তু এখনও অবধি সেই টেকনোলজি ভারতকে দেয়নি ফরাসি যুদ্ধবিমান নির্মাতা সংস্থা। সিএজি-র দাবি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আরও একবার সেই চুক্তির শর্ত মিলিয়ে দেখুক। কীভাবে বিদেশি সংস্থা তাদের দায় এড়াচ্ছে সেটা বিবেচনা করা দরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লীতে ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন ও এমবিডিএ ফ্রান্সের সঙ্গে ৫৮ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার বিনিময়ে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করে মোদী সরকার। সেই সূত্রেই দাসো রিলায়্যান্স ডিফেন্সের সঙ্গে চুক্তি করে। এরপরই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে বঞ্চিত করে তার পরিবর্তে অনিল আম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এই বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। লোকসভা ভোটের আগে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল এই ইস্যুতে তাঁর তোলা ‘চৌকিদারই চোর হ্যায়’ স্লোগান। উল্লেখ্য, ৩৬টির মধ্যে পাঁচটি রাফাল ইতিমধ্যেই ভারতে চলে এসেছে। লাদাখে টহলদারিও করছে সেগুলি।