আম জনতা এবং বিরোধীদের চোখে ধুলো দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ায় এবার বেজায় অস্বস্তিতে পড়ল মোদী সরকারের। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে খরচ ও অপারেটিং রেশিয়োকে ভালো ভাবে দেখাতে ধরা হয়েছিল পরের বছরের পণ্য বহনের অগ্রিম অর্থকেও। আর এভাবে ‘উইন্ডো ড্রেসিং’-এর মাধ্যমেই ভারতীয় রেল মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করেছে বলে ক্যাগ (কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া)-এর রিপোর্টে উঠে এল।
প্রতি ১০০ টাকা খরচ করতে রেল যত টাকা আয় করে, সেই অনুপাত হল অপারেটিং রেশিয়ো। সেই অনুপাত যত বেশি হয়, তত রেলের কোষাগারের ওপর চাপ পড়ছে বলে ধরা হয়। গত বছর ডিসেম্বরে ক্যাগের তরফে জানানো হয়েছিল, রেলের অপারেটিং রেশিয়ো ৯৮.৪৪ শতাংশ। যা শেষ ১০ বছরে সবথেকে খারাপ ছিল। ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় ২০১৭-১৮ সালে রাজস্ব উদ্বৃত্ত ৬৬ শতাংশেরও বেশি (১,৬৬৫.৬১ কোটি টাকা) হ্রাস পেয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ সালে অপারেটিং রেশিয়ো ৯২.৮ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল রেল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা ৯৭.২৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় করতে রেলের কোষাগার থেকে বেরিয়ে গিয়েছে ৯৭.২৯ টাকা।
বুধবার সংসদের পেশ করা রিপোর্টে ক্যাগ জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে পণ্য বহনের অগ্রিম বাবদ ৮,৩৫১ কোটি টাকা দিয়েছিল এনটিপিসি এবং কোনকোর। সেই অর্থ যদি ধরা না হত, তাহলে ৯৭.২৯ শতাংশের পরিবর্তে রেলের অপারেটিং রেশিয়ো ১০১.৭৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকত। সেক্ষেত্রে রেলের আয়ের থেকে খরচ বেশি হত ৭,৩৩৪.৮৫ কোটি টাকা। ওই বছর রেলের রাজস্ব উদ্বৃত্ত ছিল ৩,৭৭৩.৮৬ কোটি টাকা। তবে পণ্য বহনের অগ্রিম, ডিআরএফ এবং পেনশন তহবিলে কম অর্থ বরাদ্দের কারণে ব্যয়ের তুলনায় আয়কে বেশি দেখানো সম্ভব হয়েছে। রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘কাজ চালানোর খরচ ও অপারেটিং রেশিয়ো ভাল ভাবে দেখানোর জন্য উইন্ডো ড্রেসিংয়ের আশ্রয় নিয়েছিল রেল মন্ত্রক।’
শুধু তাই নয়। ক্যাগের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রেল অভ্যন্তরীণ আয়ের যে লক্ষ্য নিয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। রিপোর্ট বলা হয়েছে, ‘সংশোধিত ১৯৭,২১৪ কোটি টাকারও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি রেল। ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষের পণ্য পরিবহনের জন্য এনটিপিসি এবং কোনকো যে অগ্রিম ৮,৩৫১ কোটি টাকা দিয়েছিল, তাও রেলের অভ্যন্তরীণ আয়ে যোগ করা হয়েছে।’ মোদী সরকারের তরফে রেলের প্রকল্প নিয়ে বারবার যে দাবি করা হয়, তা নিয়েও ক্যাগের রিপোর্টে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তোলা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০১৫-২০ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু আঞ্চলিক রেলের অক্ষমতা এবং রেলওয়ে বোর্ড স্তরে দুর্বল নজরদারির কারণে প্রকল্পগুলি ধীরগতিতে এগিয়েছে।’