কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিলের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন রাজ্যের শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের কৃষকরা। তাঁদের দাবি, এই বিল কৃষকদের সর্বনাশ ডেকে আনবে। তাঁদের আশঙ্কা, কৃষিপণ্যের নিয়ন্ত্রণ থাকবে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে। আঘাত পড়বে সাধারণ কৃষকদের ওপর। এমনকী খাদ্যপণ্যের দর সাধারণ মানুষের নাগালে থাকা নিয়েও সংশয় জমছে জেলার বহু সাধারণ মানুষদের মধ্যে।
কৃষকরা বলছেন, আমার জমি, আমার শর্ত। সেখানে অন্য লোক নাক গলাবে কেন! এ তো দাদন প্রথার মতো। এক ধরনের পরাধীনতা। শান্তিপুরের ভাগচাষী শৈলেন চণ্ডীর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল কী বুঝছেন লাভবান হবেন? রীতিমতো রাগ ঝরে পড়ল তাঁর গলায়। শৈলেনবাবুর কথায় ‘এটা চুক্তিচাষ। এই চুক্তির কোনও গ্যারেন্টি নেই। আমরা যারা অল্প জমিতে চাষ করি, ফসল কাউকে বিক্রি না করে হাটে বসেই বেচাকেনা করি, তাদের কী হবে? ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এটা সেই বিটি বেগুনের মতো ঘটনা। আমাদের হাতে আর কিছু থাকছে না।’
রাজ্য সমবায় ও কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর অনির্বাণ প্রধান বলছেন, ‘প্রাথমিক ভাবে মাণ্ডি সংস্কৃতি না থাকার ফলে চাপ হয়তো পড়বে না। তবে সার্বিক ভাবে যদি দেখি, এখানে একটা ফাউল প্লে-র সম্ভাবনা থাকছে। এক্ষেত্রে বড় বেসরকারি সংস্থাগুলি যদি কোনও পণ্য কিনে কোল্ড স্টোরেজে রাখতে চায় তবে সরকারি আইনে আটকাবে না। এসেন্সিয়াল কোমোডিটি অ্যাক্টের দরুণ আগে অতিরিক্ত মাল গুদামজাত করা আটকাতে পারত সরকারই। এখন তা আর থাকল না।’
দীর্ঘ দিন ধরে কৃষকের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ভুগবে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষ। করোনার কারণে যাদের অনেকেরই হাঁড়ির হাল। রবীনবাবু বলছেন, ‘বাংলার মান্ডিগুলিতে ক্রেতা-বিক্রেতা তেমন একটা যায় না। ফলে প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে না কৃষকরা। তবে ক্ষতিটা অন্য রকম। রাজ্যে বহু আনাজই আসে বাইরে থেকে। নতুন বিল আইনে পরিণত হলে সেই আনাজ আসবে নতুন মোড়কে। এখন মুদিখানায় গিয়ে আমরা অবলীলায় বলতে পারি দু’টাকার শুকনো লঙ্কা দিতে। তখন আর পারব না। প্যাকিং বাবদ সরকার জিএসটিই নেবে ৬ শতাংশ। আমার যেটুকু দরকার ততটুকু কেনার অবকাশ আর থাকবে না।’
কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই বিলের বিরোধিতায় কর্মসূচি হয়। তিনি বললেন, ‘ভোটাভুটি হলে হেরে যাবে, তাই ঝুঁকি না নিয়ে ন্যক্কারজনকভাবে বিল পাশ করাল ধ্বনিভোটে। যেভাবে বিল পাশ হল, তা গণতন্ত্রকে হত্যার শামিল।’ এই বিলের বিরোধিতায় ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে জেলা তৃণমূল।