বৃহস্পতিবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে সেখানে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ‘বিশ্বকর্মা’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা নিয়েই এবার বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে পড়েছেন তিনি। তাঁদের খোঁচা, এই মন্তব্য শ্রমিকদের দূরবস্থার প্রতি উদাসীন প্রধানমন্ত্রীর মুখে কতটা মানানসই? মোদীকে ‘ভাঁওতাবাজ’ বলছেন কাজ-হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদেরএকাংশও।
ওই ভিডিয়ো পোস্টে মোদী লিখেছিলেন, ‘বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে সকল দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আজকের দিনটি তাঁদের প্রতি সমর্পিত, যাঁদের কাছে কাজই পুজো। যাঁদের সৃষ্টি মানবতাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।’ প্রধানমন্ত্রী ব্রিজ তৈরি, ইঞ্জিনিয়ারিং, রাজমিস্ত্রি, ছুতোর, কুমোর, ইলেকট্রিক কর্মী থেকে রাস্তা তৈরির কাজে যুক্ত কর্মীদের বিশ্বকর্মা বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু মোদীর পোস্টে লকডাউনে ঘোর বিপাকে পড়া লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের কোনও উল্লেখ নেই।
২৪ মার্চ দেশে জারি হয় প্রথম দফার লকডাউন। তখন থেকেই ভিন রাজ্যে কাজ এবং রোজগার হারিয়ে দিশেহারা অবস্থা পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাদের সমস্যার সুরাহার জন্য কোনও আশার কথা শোনা যায়নি কেন্দ্রের তরফে। একটা বড় অংশকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল পায়ে হেঁটে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে। তখন তাঁদের অনেকে প্রাণ হারিয়েছিলেন সড়ক বা রেল দুর্ঘটনায়। ওই শ্রমিকদের প্রতি মোদী সরকারের সামগ্রিক ‘উদাসীনতা’ তখন প্রবল সমালোচিত হয়েছিল।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন মোদীর ভিডিয়ো পোস্টের পর সেই সমালোচনাই আবার ফিরে এসেছে। ঘটনাচক্রে, এ সপ্তাহেই পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু ও তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সংসদে উঠেছিল। মোদী সরকার যেখানে জানায়, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। তারা আরও স্বীকার করে যে, লকডাউনে বাড়ি ফেরার পথে মোট কত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়েও কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। অর্থাৎ, রাস্তাঘাটে বেঘোরে মৃত ‘বিশ্বকর্মাদের’ দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলছে মোদী সরকার।
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেত্রী তথা সাংসদ দোলা সেনের কথায়, ‘ভারতের মতো ঐতিহ্যবাহী দেশে নরেন্দ্র মোদীর মতো নাটুকে, গিমিকবাজ প্রধানমন্ত্রী এর আগে আসেননি। আসলে উনি কাজে বিশ্বাস করেন না। মনে করেন, নাটুকে ভঙ্গিতে মনভোলানো কথা বললেই সব হয়ে যায়। সে জন্যই শ্রমিকদের দুর্দশা লুকোতে বিশ্বকর্মা সম্বোধন। কিন্তু শ্রমিকরা মোদীর চরিত্র বুঝে গিয়েছেন।’