শান্তিপুর শহরের ঢাকাপাড়ার বাসিন্দা বছর ৫০-এর অপূর্বলাল সাহা। কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতায়। ভবানীপুরের রামঋক ইনস্টিটিউশনের অঙ্কের শিক্ষক অপূর্বলালবাবু। করোনা আবহে বন্ধ রয়েছে স্কুল। ফিরে এসেছেন পৈত্রিক ভিটেয়। তারপর থেকেই নিজের ভূমিকাটা বদলে ফেলেছেন আমূল। ক্লাসরুমের বাইরে গোটা শহরজুড়ে এখন তাঁর কাজের পরিধি।
গত ৬ মাসে একদিনও ছুটি নেননি তিনি কারণ গোটা শান্তিপুর শহরের মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে সচেতন করার দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। করোনার থেকে মানুষকে বাঁচাতে নিজের ও স্ত্রীর সঞ্চয় থেকে ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন ১৬ লক্ষ টাকা। এখনও শহরের গলি গলি ঘুরে স্যানিটাইজেশনের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিলি করছেন মাস্ক-স্যানিটাইজার।
ইতিমধ্যে তিনি করোনা প্রতিরোধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। তাতে যোগ দিয়েছেন এলাকার কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকরা। লকডাউনের সময় ভিনরাজ্যে কাজ হারিয়ে তাঁরা যখন ঘরে ফিরে এসেছিলেন তখন তাদের সংসার সচল রাখার দায়ভার অনেকটাই স্বেচ্ছায় বহন করেছেন অপূর্ববাবু। এখন তাঁরাই অপূর্ববাবুর শহর সাফাই অভিযানের সৈনিক। বিনিময়ে তাঁদের হাতে সাধ্যমতো পারিশ্রমিক তুলে দিচ্ছেন এই অঙ্কের শিক্ষক। যাতে রেশনে পাওয়া চাল আর এই সামান্য টাকায় কোনওক্রমে এই পরিস্থিতিটা পার করতে পারেন তাঁরা।
শান্তিপুর শহরের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে স্যানিটাইজেশন মেশিন বসিয়েছেন তিনি। স্যানিটাইজেশন মেশিন বসিয়েছেন শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও। এখন চলছে পাড়ায় পাড়ায় গলিতে গলিতে স্যানিটাইজেশনের কাজ। অপূর্ববাবুর কথায়, ‘‘এই শহরে ছোট থেকে বড় হয়েছি আমি। এখন কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকলেও এই শহরের প্রতি দায় তো ঝেড়ে ফেলতে পারি না। তাই এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমার শহর ভাল থাকুক, এখানকার মানুষরা সুস্থ থাকুক, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’