কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল করার ছাড়পত্র পেয়েছে উত্তরবঙ্গের একমাত্র সক্রিয় বিমানবন্দর বাগডোগরা। দেশের মধ্যে ১৭তম ব্যস্ত এই বিমানবন্দরের ওপর নির্ভরশীল উত্তরবঙ্গ ছাড়াও সিকিম ও বিহারের একাংশের মানুষ। পাহাড় ও ডুয়ার্সের পর্যটকদের একটা বড় অংশই আসেন এই বিমানবন্দর দিয়ে। এবার বাগডোগরা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের জন্য এবার চলরি মাসের জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় শীলমোহর দিতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বস্তুত বাগডোগরার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ওঠার পথে এক এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের বিমান ধরার চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। লকডাউনের আগে এই বিমানবন্দর দিয়ে ২৫ লক্ষ যাত্রী বছরে যাতায়াত করেছেন। বাগডোগরা বিমানবন্দর দেশের সামরিক বাহিনীর মালিকাধীন বিমানবন্দর। প্রথমদিকে শুধুমাত্র দিনের বেলাতেই এই বিমানবন্দর দিয়ে বিমান চালানোর অনুমতি দেওয়া হত। পরে এই বিমানবন্দরে নাইট ল্যান্ডিংয়ের সুবিধা ও ফগ মেন্টেনেন্সের সুবিধা যুক্ত হওয়ার পরে রাতের দিকেও বিমান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালেই এই বিমানবন্দর দিয়ে বছরে ১০ লক্ষের বেশি যাত্রী যাতায়াত করার লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছিল।
এবার রাতের দিকেও বিমান চলাচল শুরু হয়ে যাওয়ায় কলকাতা, দিল্লী, গুয়াহাটি ছাড়াও দেশের অনান্য শহরগুলি থেকেও বাগডোগরার বিমান চলাচল শুরু হয়ে যায়। তার জেরে ২০১৯ সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে বছরে ২৫ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করার রেকর্ড গড়ে দেন। দেশের অসামরিক বিমানবন্দরের পরিচালন নিয়ম অনুযায়ী কোনও দেশীয় বিমানবন্দর দিয়ে বছরে ২৫ লক্ষের বেশি যাত্রী যাতায়াত করলে তা আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নিত হওয়ার সুযোগ পায়। সেই নিয়মানুযায়ী বাগডোগরা দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটেও বিমান চালাবার জন্য ছাড়পত্র দেওয়ায় আগ্রহ দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমানমন্ত্রক।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাগডোগরা বিমানবন্দরের ছোট টার্মিনাল ভবন ও ছোটও রানওয়ে। এদিকে উত্তরবঙ্গের বুকে পর্যটনের ক্ষেত্রে জোয়ার আনতে রাজ্য সরকার চাইছে বাগডোগরা দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও এশিয় দেশগুলির মধ্যে উড়ান চলুক। পাশাপাশি নেপাল ও ভূটানও দীর্ঘদিন ধরে এই বিমানবন্দর দিয়ে বিমান চালাতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে।
তাই সব দিক বিচার করেই বাগডোগরা বিমানবন্দরের উত্তরদিকে থাকা একটি চা বাগানের লিজ বাতিক করে ওই জমি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চলেছে রাজ্য। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই চা বাগানের মালিকের সঙ্গে রাজ্যের পাকা কথা হয়ে গিয়েছে ক্ষতিপূরণ বিষয়টি নিয়ে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই রাজ্য সরকার ওই জমি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাশ করাতে চলেছে মন্ত্রীসভার বৈঠকে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের কাছে এই বিমানবন্দরের নাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখার আবেদন পাঠাচ্ছে তারা।