বিজেপির যে আইটি সেলের বিরুদ্ধে অহরহ অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা, সেই আইটি সেলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্বয়ং বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী!
বিজেপির বর্ষীয়ান এই সাংসদের অভিযোগ বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে স্বামী লিখেছেন, ‘বিজেপির আইটি সেলের দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। সেলের কিছু সদস্য আমার ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য নকল টুইট ব্যবহার করছেন।’ এখন প্রশ্ন, কারা কীভাবে কাজ করেন বিজেপির এই বিভাগে? কীভাবে মুহূর্তে গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কোনও বিশেষ বার্তা? কোনও কিছু ভাইরাল করার পদ্ধতিই বা কী?
প্রসঙ্গত, দিল্লীতে ৬–এ দীনদয়াল মার্গে বিজেপির প্রাসাদোপম দলীয় কার্যালয়ের কথা কমবেশি সকলেই জানেন। সেখানে ওপরের দিকে একটি তলার প্রায় সিংহভাগ জুড়ে কাজ করে দলের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কেন্দ্রীয় শাখা। শাখায় কাজ করেন জনা পঞ্চাশেক বাছাই করা কর্মী। বিশেষজ্ঞ ওই কর্মীদের প্রধান অমিত মালব্য। এই বিভাগের কর্মীরা প্রত্যেকেই হার্ডকোর পেশাদার। এঁরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। মোটা মাইনে দিয়ে আনা হয়েছে। দপ্তরের এই তলায় সাধারণের ঢোকার অধিকার নেই। আগাম অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারেন না দলের কর্মীরাও। অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। শাখার কর্মীরা ঢোকেন কার্ড সোয়াইপ করে।
এই কেন্দ্রীয় আইটি সেল থেকেই দেশের প্রতিটি রাজ্য, জেলা এমনকি প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিটি পঞ্চায়েতে মুহূর্তের মধ্যে যে কোনও ‘খবর’ পৌঁছে দেওয়ার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। নেটওয়ার্কের জাল বিছানো রয়েছে দিল্লি থেকে একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত। ধরা যাক, রাজনৈতিক স্বার্থে পরিকল্পনামাফিক যে কোনও একটি বিষয় রটিয়ে দিতে হবে। বিজেপি আইটি সেল এর জন্য সময় নেয় মেরেকেটে আধ ঘণ্টা। এরমধ্যেই যে কোনও বিষয় ভাইরাল হয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার-সহ অন্য সামাজিক মাধ্যমে এমন ভাবে ‘খবরটি’ ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে সেটা সত্যি বলে মনে হয়।
কাদের দিয়ে এই কাজ করানো হয়? প্রতিটি রাজ্যে বিজেপির একটি করে আইটি সেল রয়েছে। একইভাবে আইটি সেল রয়েছে জেলাস্তরেও। রাজ্য ও জেলাস্তরে দলেরই বাছাই করা কর্মীদের এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া আছে। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দিল্লী থেকে কোনও একটি বিষয় প্রথমে রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়। আগে থেকে তৈরি করা নেটওয়ার্কে সেটি পৌঁছে যায় জেলায়। জেলা থেকে পঞ্চায়েত স্তরে। এছাড়া ফেসবুকে গ্রুপ তৈরি করা আছে। টুইট করার জন্য নির্দিষ্ট লোক রয়েছেন। সবার দায়িত্ব আলাদা। রাজ্য ও জেলাস্তরের কর্মীরা সেটি গ্রুপে পোস্ট করেন।
পাশাপাশি আইটি সেলের প্রতিটি কর্মীর দায়িত্ব হল যত বেশি সম্ভব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা। সেই গ্রুপে কমপক্ষে ২৫০ জন সদস্য থাকতে হবে। ফেসবুক ও টুইটারের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সমান ভাবে সেটি পোস্ট করতে হবে। এইভাবেই মাত্র ৩০ মিনিটে দিল্লী থেকে দেশের যে কোনও রাজ্যের প্রতিটি বুথে নির্দিষ্ট ‘বার্তা’ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলে। এখানে রাজ্য আইটি সেলের বাড়তি দায়িত্ব থাকে। তা হল, কেন্দ্রীয় আইটি সেল যে পোস্ট করছে, সেটিকে স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে পোস্ট করা।
এছাড়া বিজেপি আইটি সেলের আরও একটি কাজ আছে। তা হল, প্রতিটি সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে নজরদারি চালানো। প্রতিটি সংবাদপত্রে কী কী সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, প্রতিদিন সেগুলোর ওপর নজরদারি চালিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়। তারপর উপযুক্ত ব্যবস্থার জন্য দলের কাছে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া যে বিজেপি নেতাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ৫০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে, কয়েক মাস আগে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রত্যেকের নির্বাচনী কেন্দ্রে একজন করে বিশ্বস্ত সর্বক্ষণের কর্মী চান মালব্য। ওই কর্মীদের নেতৃত্বে বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি, যার সদস্য সংখ্যা হতে হবে কমপক্ষে ২৫০।