মাছ ধরতে গিয়ে একের পর এক মৎস্যজীবীর বাঘের হানায় মৃত্যু হতে থাকায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে সুন্দরবনে। তাই সেই অঞ্চলে নজরদারি ও সচেতনতা বাড়াতে নদীপথে ১০টি বোট নামাল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। পরিসংখ্যানে জানা গিয়েছে শুধু লকডাউনের পাঁচ মাসেই ১৩ জন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে বাঘের আক্রমণে। এই ঊর্ধ্বমুখী সংখ্যা ভাবিয়ে তুলেছে বনমন্ত্রী থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তাদের। চলতি সপ্তাহেই নতুন করে বাঘের হানায় তিনজন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হওয়ায় জল-জঙ্গল নির্ভরশীল মৎস্যজীবীদের নৌকা নিয়ে নদী খাঁড়ির গভীরে ঢুকে যাওয়ায় একগুচ্ছ বিধি নিষেধ জারি করে সেই সম্পর্কে সচেতন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবারই সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত বসিরহাট রেঞ্জের ঝিলা ২ ও ৪, সজনেখালি রেঞ্জের অন্তর্গত ঝিলা ৬ নম্বর কম্পার্টমেন্ট এলাকায় পাঁচটি করে মোট দশটি টহলদারি বোট নামানো হয়েছে নদীতে। বোট গুলিতে ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীদের পাশাপাশি জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি (যৌথ বন পরিচালনা সমিতির) সদস্যদেরকেও টহলদারির কাজে লাগানো হয়েছে।
বিশেষ করে নজর রাখা হচ্ছে যাতে বৈধ অনুমতি ছাড়া কেউ নদী খাঁড়িতে প্রবেশ করতে না পারে। সেই সঙ্গে নদীর জলেই কাঁকড়া ধরার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কারণ খাঁড়িতে নৌকা নিয়ে ঢুকে বাঘের নাগালের মধ্যে গিয়েই নিজেদের মৃত্যু ডেকে আনছেন মৎস্যজীবীরা। আবার অনেকে নিয়ম ছাড়াই জঙ্গলে জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন। বাঘের হানায় মৃত্যু রুখতে কেউই যাতে সরকারি নির্দেশ অমান্য না করেন সেই পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে সতর্কতামূলক লিফলেট বিলি ও মাইকে প্রচার। এদিন বনকর্মীদের তরফে হরিণভাঙা নদী, দত্তা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের সচেতন করা হয়।
জীবন ও জীবিকার স্বার্থে সুন্দরবনের ভূমিপুত্রদের আজও নদী ও খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যেতে হয়। আর এই কাজ করতে গিয়ে প্রতি বছরই বাঘের আক্রমণে বহু মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। বৈধ অনুমতি থাকলে মৃত কিংবা আহতের পরিবার সরকারি ক্ষতিপূরণ পান। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৈধ অনুমতি ছাড়াই জঙ্গলে ঢোকেন স্থানীয় মানুষ। তাই নদী-খাঁড়িতে জীবন খোয়ানো মানুষগুলির পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ থাকে না আর। এটাই সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকার মৎস্যজীবীদের রোজনামচা।