গত পরশুই নানা টালবাহানার পর ইনভেস্টর এসেছে ইস্টবেঙ্গলে। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাক্ষী রেখে সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার আইএসএল খেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল নতুন ইস্টবেঙ্গলে। তবে লাল-হলুদ ভক্তদের যে দু’টি বিষয় নিয়ে সব চেয়ে বেশি আগ্রহ থাকছে, তা হচ্ছে, প্রিয় ক্লাবের জার্সির রং কেমন হতে যাচ্ছে? এবং, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নাম পাল্টে যাবে কি না? মোহনবাগান এটিকের সঙ্গে হাত মেলানোর পরেও তাদের নাম রাখা হয়েছে। তবে জার্সিতে ঐতিহ্যবাহী সবুজ-মেরুন রংয়ের তারতম্য ঘটানো হয়নি।
ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে আরওই পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখায় সুবিধা কারণ, তাদের সঙ্গে লগ্নিকারী সংস্থা যুক্ত হয়েছে। এটিকের মতোই প্রায় আশি শতাংশ অংশীদারিত্ব নিয়ে ফেললেও শ্রী সিমেন্টের নিজস্ব কোনও দল বা জার্সি নেই। তাই ইস্টবেঙ্গলের নাম যেমন অটূট থাকবে তেমনই জার্সির ঐতিহাসিক লাল-হলুদ রংয়ে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও কার্যত নেই।
আইএসএলের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ক্লাবেরই নামের সঙ্গে লগ্নিকারী সংস্থার নাম যোগ করা যায় না। বেঙ্গালুরু এফ সি হিসেবেই সুনীল ছেত্রীদের ক্লাব খেলে, তাদের লগ্নিকারী সংস্থার নাম মিশিয়ে নামকরণ করা সম্ভব হয়নি। নিয়ম মতো জার্সির গায়ে লগ্নিকারী বা স্পনসরশিপের নাম থাকতে পারে, যেমন সব খেলাতেই দেখা যায়। লগ্নিকারী সংস্থার পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছে, ইস্টবেঙ্গল যে কলকাতার ক্লাব, সেই ছোঁয়াটি রেখে নামকরণ করা যায় কি না। যেমন সুনীলদের দল বেঙ্গালুরুর, তাই বেঙ্গালুরু এফ সি। অথবা জামশেদপুর এফ সি। অথবা এফ সি গোয়া, মুম্বই সিটি এফ সি, চেন্নাইয়িন এফ সি।
কিন্তু এখানে যেহেতু ইস্টবেঙ্গল নামটিকে ঘিরে প্রচুর মানুষের আবেগ জড়িত, তাই শুধু শহরের নামে ক্লাবের নামকরণ করার প্রশ্ন নেই। ইস্টবেঙ্গলকে রেখে একটি নাম ভাবতে হবে। তা হলে কি কলকাতা ইস্টবেঙ্গল? কারও কারও মাথায় সে রকম ভাবনা ঘুরছে। তবে এ বারে আইএসএলে খেলার জন্য এতই কম সময় রয়েছে হাতে যে, এত দ্রুত বিরাট কিছু পরিবর্তন করা কঠিন হবে। প্রথম বছরটা অন্তত একই নাম এবং একই ধরনের জার্সি পরে ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে প্রবেশ করতে পারে।
এর পাশাপাশি নতুন কোম্পানি তৈরি করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে ইস্টবেঙ্গলে। নতুন যে বোর্ড গঠন করা হবে, সেখানে ক্লাবের তরফ থেকে দু’জনের বেশি থাকবেন না। বাকি সব কমিটি মিলিয়ে আরও দু’জন। সব কিছুতেই আশি শতাংশ প্রতিনিধিত্ব থাকবে লগ্নিকারী সংস্থার। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সময়ে উপস্থিত থাকা শ্রী সিমেন্টের প্রতিনিধি বলেছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সব খেলারই স্বত্ব কিনেছে শ্রী সিমেন্ট। যদি আট জনের বোর্ড হয়, তা হলে সংস্থার পক্ষ থেকে থাকবেন ছ’জন। সেক্ষেত্রে ফুটবল বিশারদ রাখা হতে পারে চার জন। অন্য খেলা থেকে আরও দু’জন। দশ জনের বোর্ড হলে সংস্থার পক্ষ থেকে থাকবেন আট জন।’’
যদিও শুধু বিশেষজ্ঞ রেখে বোর্ড করা হয় কি না, সেটাও দেখার। ৪ ফুটবল বিশেষজ্ঞের মধ্যে এক জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কিংবদন্তিকে আনার কথাও ভাবা হচ্ছে। যিনি নতুন ইস্টবেঙ্গলের মুখ হতে পারেন। আর্থিক চুক্তি করে তাঁকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবেও ভাবা হতে পারে। আইএসএলের কথা মাথায় রেখে বিদেশি কোচ খোঁজা শুরু হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে এক জন ভারতীয় কোচও নিয়োগ করা হবে। তবে যতক্ষণ না বোর্ড গঠন হচ্ছে, ততক্ষণ কোনোকিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।