এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে চলতি বছরেই আইএসএল খেলবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান। অথচ শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল নেই দেশের সর্বোচ্চ লিগে, এটা মেনে নিতে পারছিলেন না লক্ষ লক্ষ লাল-হলুদ সমর্থক থেকে শুরু করে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকারাও। অবশেষে মিলেছে স্বস্তি। গতকালই নবান্নে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন লগ্নিকারীর নাম সরকারি ভাবে ঘোষণা করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভাইচুং ভুটিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ইস্টবেঙ্গলের প্রতীক পোস্ট করে লেখেন, ‘‘আইএসএল, আমরা আসছি।’’
ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্য সেরা স্ট্রাইকার বলেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ লাল-হলুদ সমর্থকের জন্য আমার দারুণ আনন্দ হচ্ছে। প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন ওঁরা।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবেও আমিও প্রচণ্ড উত্তেজিত। কারণ, আইএসএলে ডার্বি হবে না, এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল। এই কারণে আমি দীর্ঘ দিন ধরেই বলছি, কলকাতার দুই প্রধানকে দরকার আইএসএলের। না হলে প্রতিযোগিতার আকর্ষণ বাড়বে না। পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানেরও আইএসএলের মতো মঞ্চ দরকার।’’
লা লিগার উদাহরণ দিয়ে ভাইচুং আরও বলেন, ‘‘রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে ছাড়া কেউ লা লিগার কথা ভাবতে পারে? তেমনই ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানকে ছাড়াও দেশের সর্বোচ্চ লিগ অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তাই দুই প্রধানের আইএসএলে খেলাটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। এ বারই তা হওয়ায় দারুণ আনন্দ হচ্ছে।” ভাইচুংয়ের মতোই উদ্বিগ্ন ছিলেন লাল-হলুদের আরেক প্রাক্তনী সুকুমার সমাজপতি। তাঁর কথায়, ‘‘এটিকে-মোহনবাগান আইএসএলে খেলবে, অথচ ইস্টবেঙ্গল থাকবে না, ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছিল। কোনও বাঙালির পক্ষেই এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানকে কেন্দ্র করেই যুগ যুগ ধরে বাঙালি বেঁচে রয়েছেন। দুই প্রধান আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।’’
ইস্টবেঙ্গলের আইএসএলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে শ্যাম থাপাও একইরকম আবেগপ্রবণ। তিনি বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে ছাড়া ভারতীয় ফুটবলের বৃত্ত কখনও সম্পূর্ণ হয় না। যত তারকাই থাকুক, ডার্বির উন্মাদনা এটিকে-মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচে কখনও দেখা যাবে না। তাই মনেপ্রাণে চাইছিলাম, যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ইস্টবেঙ্গল যেন আইএসএলে খেলে।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলার ফুটবলের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বারবার এগিয়ে এসেছেন, তাতে আমি অভিভূত।’’
ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের বেশি আনন্দ হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য। বলছিলেন, ‘‘লাল-হলুদ সমর্থকেরা প্রায়ই আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন, দাদা আমরা কি এই মরসুমে আইএসএলে খেলব না? আমি কোনও উত্তর দিতে পারতাম না। প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছিলেন ওঁরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বির উপরেই বেঁচে রয়েছে ভারতের ফুটবল। বিগত কয়েক মাস ধরে ঐতিহ্যের এই দ্বৈরথের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। তবে এখন সব সমস্যা মিটে যাওয়ায় সেই ডার্বির অপেক্ষাতেই দিন গুনছি আমরা।’’