বছর দেড়েক আগে লোকসভা ভোটের আগে এই ধরনের একাধিক বৈঠক হয়েছে। এবং প্রতিবারই দেখা গিয়েছে, সেই বৈঠকের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধী শিবির যখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছে, তখনই ডাক পড়েছে মমতার। ব্যতিক্রম হল না বুধবারও। নিট ও জয়েন্টের পরীক্ষা পিছনোর দাবিকে সামনে রেখে বিরোধী শিবির যখন আরও একবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে, তখনও সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে সেই মমতাই।
নিট এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা পিছনোর দাবিতে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বুধবার এই বৈঠকটি ডেকেছিলেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ওই বৈঠকে উপস্থিত ৭ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একমাত্র মমতাই ছিলেন পুরোপুরি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কহীন। বাকি ৬ জনের মধ্যে ৪ জনই কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের এবং দু’জন ছিলেন কংগ্রেস জোট শাসিত রাজ্যের। স্বাভাবিকভাবে এই বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীই শেষকথা বলবেন এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সোনিয়া নন, সব ইস্যুতে শেষ কথা বলছেন মমতা। এমনকী বৈঠক পরিচালনার ভারও মমতার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন সোনিয়া। যা সচরাচর দেখা যায় না।
৭ মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে সোনিয়া সবার প্রথমে মমতাকেই বলার সুযোগ দেন। নিজের বক্তব্য শেষ করে সোনিয়াকে বৈঠক এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন মমতা। তাতে সোনিয়া বলেন, ‘আপনি তো ভাল বলছেন। আপনিই চালিয়ে যান।’ দু’পক্ষের দু’একবার বিনীত অনুরোধের পর এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই বৈঠক পরিচালনা শুরু করেন। অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের কথা বলা এবং শোনার মাঝে মমতাই ঠিক করে দিলেন আগামী দিনের কর্মসূচি। ঠিক হল, সাত রাজ্য একসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে। অন্যান্য বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলির সঙ্গেও কথা বলবেন মমতা। অন্যদিকে বিরোধীদের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হবে। পাঞ্জাব সরকারের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধিদল যাবে। মমতাই সোনিয়া এবং ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংকে অনুরোধ করেন, একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। অর্থাৎ সোনিয়ার ডাকা এই পুরো বৈঠকটাই ছিল ‘মমতাময়’। এই বৈঠকের পর বিরোধী শিবির সরকারের অনড় মানসিকতা বদলাতে পারুক না পারুক, সোনিয়ার নজরে মমতার কদর যে আগের থেকে একটুও কমেনি, তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।