মাস দুয়েক আগে উচ্চ বর্ণের এক ব্যক্তির বাগান থকে ফুল তুলেছিল ১৫ বছরের এক দলিত কিশোরী। তার সাজা হিসেবে ওই কিশোরীর পরিবার সহ মোট ৪০টি দলিত পরিবারকে গত দুসপ্তাহ ধরে সামাজিক বয়কট করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উড়িষ্যার ঢেঙ্কানল জেলার কান্তিও কাটেনি গ্রামে।
মোট ৮০০ পরিবারের কান্তিও কাটেনি গ্রামে তফসিলি জাতি নায়েক সম্প্রদায়েরই শুধু ৪০টি পরিবার আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটি দলিত পরিবার আপত্তি করায় তাদের পুরো সম্প্রদায়টিকেই সামাজিক বয়কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিশোরীর বাবা নিরঞ্জন নায়েকের অভিযোগ, ঘটনা জানাজানি হতেই তাঁরা ওই উচ্চ বর্ণ পরিবারটির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি উচ্চ শ্রেণি। গ্রামে একাধিক বৈঠকের পর তাদের ৪০টি পরিবারকেই সামাজিকভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের শীর্ষস্থানীয়রা। গত ১৭ তারিখ স্থানীয় থানা এবং জেলাশাসকের স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন ওই দলিতরা। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের ছেলেমেয়েদের গ্রামের স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি ওই সম্প্রদায়ের শিক্ষকদেরও অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রামের রাস্তায় তাঁদের কোনও শুভ বা শোকমিছিলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। যেহেতু তাঁদের সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষই অল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর, তাই অনেকেই ওই গ্রামে ভাগচাষ করেন। সেই কাজ থেকেও তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
পুরো ব্যাপারটিকেই দুই সম্প্রদায়ের বিবাদ বলে উল্লেখ করে পঞ্চায়েত প্রধান প্রণবন্ধু দাসের দাবি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা বেশিরভাগ সময় তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি নিগ্রহ দমন আইনের আওতায় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করে, যা নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মনান্তর আছে। সেদিনের ঘটনার পর দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হওয়ায় বিষয়টি স্পর্শকাতর হয়ে গিয়েছিল। তাই দলিতদের সঙ্গে উচ্চ বর্ণরা কথাবার্তা বলছিল না। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
এদিকে জেলাশাসক স্বারকলিপি হাতে পাওয়ার পর দুপক্ষের মধ্যে দুদফা শান্তি আলোচনা হলেও কোনও ফল মেলেনি। কামাখ্যানগর সাবডিভিশনের সাব-কালেক্টর বিষ্ণু প্রসাদ আচার্য আশ্বাস দিয়েছেন প্রয়োজে গ্রামে শান্তি ফেরাতে আরও কয়েক দফা আলোচনায় মধ্যস্থতা করবেন তিনি। স্থানীয় টুমুসিঙ্গা থানার ইন-চার্জ আনন্দ কুমার ডাংডাং-ও পুরো গন্ডগোল শান্তি আলোচনার মাধ্যমেই মেটানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।