মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, ভারত-বাংলাদেশ তিস্তার জলবন্টন চুক্তি নিয়ে তাঁর একমাত্র আপত্তির জায়গা উত্তরবঙ্গের জলসঙ্কট। কেন্দ্র যদি সেই সঙ্কট মিটিয়ে বাংলাদেশকে জল দিতে পারে তাহলে তা নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি থাকবে না। কিন্তু ভারতীয় ভূখন্ডে চীনা অগ্রাসন এবং প্রতিবেশী মহলে ভারতকে কোণঠাসা করতে তাদের প্রচেষ্টাকে রুখতে এবার বাংলার স্বার্থ বিঘ্নিত করতে পারে কেন্দ্র। চীনের তৎপরতা ঠেকাতে ইতিমধ্যেই মোদী সরকার উদ্যোগী হয়েছে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে। সেই উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার ঢাকাও গিয়েছেন দেশের বিদেশ সচিব হর্ষ ভি. শ্রীংলা। এদিনই তাঁর তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকের দিকেই এখন নজর রেখেছে নবান্ন। চীনকে ঠেকাতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিঘ্নিত করে যাতে মোদী সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও চুক্তি করে না বসে সেটাই মূলত লক্ষ্য রাখা হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়ায় বাংলাদেশ এই নদীর ৫০ শতাংশ জল দাবি করেছে। গজলডোবায় তিস্তার ওপর যে জলাধার রয়েছে সেই জলাধারে সঞ্চিত জলের ৫০ শতাংশ দাবি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই দাবি নিয়ে আপত্তি নেই ভারত সরকারের। কিন্তু আপত্তি আছে বাংলা সরকারের। আর সেই আপত্তির বেশ কিছু যুক্তিযুক্ত কারণও আছে। এক তো তিস্তায় আর আগের মতো জলপ্রবাহ নেই। কারণ জেমু হিমবাহ ক্রমশ গলে ছোট হয়ে যাচ্ছে ও সিকিম তিস্তার বুকে একের পর এক বড় বড় বাঁধ নির্মাণ করে জল ধরে রাখছে। এই অবস্থায় গজলডোবায় যে পরিমাণ জল থাকার কথা সেই জলও পাওয়া যায় না। এদিকে তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প শেষ করার জন্য একদিকে যেমন জমি জট পুরোপুরি কাটেনি তেমনি কেন্দ্রও এক পয়সাও বরাদ্দ করেনি এই প্রকল্প সম্পূর্ণ করার জন্য। ফলে গজলডোবার জল যদি বাংলাদেশকে দিয়ে দিতে হয় তাহলে উত্তরবঙ্গ জুড়ে তীব্র জলসঙ্কট দেখা দেবে। এই কারণেই মমতা ভারত-বাংলাদেশ তিস্তাচুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ইউপিএ আমলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু মমতার আপত্তিতে সেই সময় আর চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। তবে এবার চীন বাংলাদেশকে অর্থ ঋণ দিতে রাজি হয়েছে তিস্তার বুকে জলাধার নির্মাণ করতে দেওয়ার জন্য। সেই চুক্তি সম্পাদনের আগেই এবার ভারত সরকার তড়িঘড়ি করে দেশের বিদেশসচিবকে ঢাকায় পাঠিয়েছে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের জন্য। মূলত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলি ঝালিয়ে নিতে ও সামগ্রিক পরিস্থিতির আঁচ পেতেই এই ঝটিতি সফর বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিনের বৈঠকে হাজির থাকার কথা বাংলাদেশের ভারতের রাষ্ট্রদূত রীভা গঙ্গোপাধ্যায় দাসেরও। তবে নবান্ন লক্ষ্য রাখছে বাংলার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে যেন কোনও চুক্তি স্বাক্ষরিত না হয়। সেই রকম কিছু ঘটলে মৌখিক ভাবে সরব হওয়ার পাশাপাশি আদালতে মামলা করার কথাও ভেবে রেখেছে নবান্ন।