ছাড়া তো পেলেনই না, বরং উত্তরপ্রদেশের জনদরদী ডাক্তার কাফিল খানকে আরও অন্তত ৩ মাস কাটাতে হবে জেলে। তাঁর আটকের মেয়াদ বাড়াল যোগী সরকার। জানা গিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কাফিল খানের আটক হওয়ার মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে অন্ততপক্ষে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত জেলেই কাটাতে হবে কাফিল খানকে।
আসলে রাষ্ট্রের রোষের মুখে পড়েছেন উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসক কাফিল খান। তাঁর বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারিতেই আনা হয় ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (এনএসএ)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, গত বছর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়ে আইন (সিএএ) হওয়ার পর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন কাফিল। জানুয়ারিতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলেই রয়েছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর গত ৪ আগস্ট এ বিষয়ে ফের একটি নোটিশ জারি করে। আলিগড় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি খানের বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইন (এনএসএ) প্রয়োগ করা হয়েছিল। এরপরে অবশ্য বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছিল। যদিও তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদ তাঁদের মতামতে জানায়, কাফিল খানকে জেলে রাখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যদিও ওয়াকিবহাল মহল বলছে, কাফিলকে জেলে রাখতে এমন ‘মতামত’ই যে আসবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটে ৬০ জন শিশুর মৃত্যু ঘটেছিল। সেই ঘটনায় কাফিল খানকে প্রথমে সাসপেন্ড এবং পরে গ্রেফতার করা হয়। যদিও অনেকেই মনে করেন, ওই অক্সিজেন সঙ্কটের সময় হাসপাতালে পড়ে থেকে শিশুদের বাঁচানোরই চেষ্টা করেছিলেন কাফিল। শুধু তাই নয়, অন্যান্য হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারও জোগাড় করে এনেছিলেন কাফিল খান। তিনি যদি তা না করতেন, তাহলে মৃত শিশুর সংখ্যা আরও অনেকগুণ বাড়ত। এরপর অবশ্য গত বছরের সেপ্টেম্বরেই উত্তরপ্রদেশ সরকারেরই একটি রিপোর্টে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পান কাফিল। কিন্তু সেই সময়ই অনেকেই বলেছিলেন, কাফিলের নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করাকে একেবারেই ভালো চোখে দেখেনি যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
আর সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সিএএ পাশ হওয়ার পর নতুন করে মামলার কোপে পড়েন কাফিল খান। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়ে কাফিল খান ক্যাম্পাসের শান্তিভঙ্গ করেছেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করেছেন, এমনই অভিযোগ আনা হয় কাফিলের বিরুদ্ধে। দায়ের হয় এফআইআর। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হতেই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন তীব্র হয়। গাড়ি-বাইক ভাঙচুর হয়, লাগানো হয় আগুন। সেই সুযোগটাই যেন চাইছিল যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন। এরপরি এনএসএ-র ধারায় অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। সেই এফআইআর-এর ভিত্তিতে মুম্বই বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।