লোকসভা ভোটের আগে হওয়া বাম-কংগ্রেস জোটের অন্যতম কান্ডারী ছিলেন তিনি। আগামী বিধানসভার আগে তাঁর দিকেই তাকিয়েছিল দুই শিবির। কিন্তু কয়েকদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। এরপর কার হাতে সেই দায়িত্ব যেতে চলেছে তা কারোরই জানা নেই। তবে যার হাতেই দায়িত্ব যাক না কেন তাঁর সব থেকে বড় অগ্নিপরীক্ষা হতে চলেছে আগামী রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে একটা মসৃণ জোট গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটি। কারন এই নির্বাচন দুই শিবিরের কাছেই কার্যত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করা বামেদের ঝুলি একদম খালি হয়ে গিয়েছে এ রাজ্যে গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে। কংগ্রেস যাও বা ২টি আসন দখল করতে সমর্থ হয় বামেরা একদম শূন্য। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলা বিজেপিকে ঠেকিয়ে দুই দলই চাইছে রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে। তাই প্রকাশ্যে দুই দলই চাইছে জোট গড়ে লড়াই করতে। কিন্তু সব কিছু কী মসৃণ চলছে! সম্ভবত নয়। অন্তত বাম শিবিরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে যে বড় রকমের দ্বন্দ্ব চলছে তা ভরা হাটে হাঁড়ি ভাঙার মতই ভেঙে দিয়েছেন বাম নেতা মানব মুখোপাধ্যায়।
একটা নয়, দু-দুটো পোস্ট। দুটি চূড়ান্ত পরস্পর বিরোধীতায় পরিপূর্ণ। দুটিতেই চূড়ান্ত প্রাসঙ্গিক বাম-কংগ্রেস জোট। কার্যত বাম শিবিরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে বিবাদ তুঙ্গে উঠেছে সেটাই যেন চার দেওয়ালের বাইরে এনে ফেলে দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মানব মুখোপাধ্যায়। তিনি তাঁর নিজের ফেসবুক পেজে যে দুটি পোস্ট করেন, তা দেখলে মনে হবে জোট নিয়ে বাম শিবিরের দুই পরস্পর বিরোধী মতকে তিনি তুলে ধরেছেন। একদল চাইছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখা, অন্যদল চাইছে দলের আদর্শ আঁকড়ে বসে থাকতে।
বুধবার মানব তাঁর প্রথম পোস্টটিতে লেখেন, ‘আজ আবার প্রমাণ হল, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের অবস্থান সুবিধাবাদী। সব ধর্মকে উৎসাহ দেওয়া কোনও রাজনৈতিক দলের কাজ না। রাজনৈতিক দল কোন ধর্মকে আলাদা করে উৎসাহ দেবে না। এটাই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা।’ এর ঠিক ১৫ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় পোস্ট। সেখানে লিখলেন, ‘আজকের পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই আমাদের এগোতে হবে।’ তাঁর এই দুই চরম বিপরীত পোস্টকে ঘিরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। মানবের এই দুই ভিন্নমুখী পোস্ট আদতে বাম শিবিরের দুই পৃথক গোষ্ঠীর অবস্থান, তা বলাই বাহুল্য।