এক বছর আগেও ‘বিতর্কিত’ ছিল। তবে নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের ‘ঐতিহাসিক’ রায়ে মীমাংসা হওয়ার পরেই চরমে উঠেছিল প্রস্তুতি। সেসব পেরিয়ে এখন অপেক্ষার ঘণ্টা গুনছে অযোধ্যা। হাতে আর মাত্র একদিন। তার পরই শুরু হবে রামমন্দিরের ভূমিপুজো। আগামীকাল রাম জন্মভূমিতে ৪০ কেজির রুপোর ইঁট রাখবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূচনা করবেন মন্দির নির্মাণের। সেই উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে গোটা অযোধ্যা নগরী। ইতিমধ্যেই রাস্তার দু’ধারে বাড়িগুলির ছাদে উড়ছে নানা আকারের পতাকা। কোনওটাতে হনুমানের ছবি আঁকা। কোনওটাতে রামচন্দ্রের ছবি আঁকা। কোথাও আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ‘ওঁ’ লেখা।
প্রসঙ্গত, করোনা বিধির জন্য কাটছাঁট হয়েছে অতিথি তালিকায়। ৫০ জন ভিভিআইপি অতিথি উপস্থিত থাকবেন অনুষ্ঠানে। মোট অতিথির সংখ্যা ১৭৫। অযোধ্যাবাসী চোখ রাখবেন পর্দাতে। তবে ইকবাল আনসারি আর গায়ত্রী দেবীর আর একটু ভাগ্যবান। দু’জনেই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। পাঠিয়েছেন খোদ মন্দির নির্মাণ ট্রাস্টের সভাপতি মহন্ত নৃত্যগোপাল দাস। আমন্ত্রণপত্রে দুপুর সাড়ে ১২টায় যোগ দিতে বলা হয়েছে। থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল।
ইকবাল জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই যাবেন। ‘বিতর্কিত’ ভূখণ্ডে কী হবে? মন্দির না মসজিদ? সেই নিয়ে মামলায় অন্যতম আবেদনকারী ছিলেন হাসিম আনসারি এবং ছেলে ইকবাল। চার বছর আগে ৯৬ বছর বয়সে মারা গেছেন হাসিম। মামলাও হেরেছেন আনসারিরা। কিন্তু তা বলে যাবেন না, একথা ভাবতেই পারেন না ৫৩ বছরের ইকবাল। তিনি বলেন, ‘কেন যাব না? অতীত ভুলে যান। উচ্চ আদালত রায় দিয়ে দিয়েছে। সকলে সেই রায় মেনে নিয়েছেন। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।’ জমি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ‘সুপ্রিম’ রায়ে। কিন্তু ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলা চলছে। সেই নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি ইকবাল।
তাঁর কথায়, ‘অযোধ্যা ধর্মনগরী। আমার বাবা আর আমি জমির অধিকার নিয়ে লড়েছি। কোনও বিশেষ ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।’ বুধবারের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন গায়ত্রী দেবীও। নিজেই জানিয়েছেন তিনি। ১৯৯০ সালে নভেম্বরে তিন দিনে দ্বিতীয়বার বাবরি মসজিদ ভাঙতে যায় করসেবকরা। পুলিশের গুলিতে মারা যান গায়ত্রী দেবীর স্বামী রমেশ পাণ্ডে। গায়ত্রীর কথায়, ‘যখনই আমন্ত্রণ পাই, ঠিক করি যাবই। আমার স্বামীর আত্মা শান্তি পাবে। কখনও না ফেরার জন্য তিনি সেখানে গেছিলেন। ঘরে চারটি সন্তান। ছোটটি তখন আমার কোলে। সামান্য পুঁজি। সেই দিয়ে অনেক কষ্টে চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছি। খুব কঠিন সময় গেছে।’