করোনা অতিমারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ স্কুল-কলেজ। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য প্রায় সর্বত্রই চলছে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন স্মার্টফোন। শহুরে সম্পন্ন ঘরের ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই অনলাইন ক্লাস করতে পারলেও প্রান্তিক ভারতের দরিদ্র মানুষগুলি কি অবস্থা। কোনওরকমে পেটের ভাতটুকু যোগাড় করতেই যাদের হিমশিম অবস্থা, যারা তার মধ্যেই লেখাপড়া শেখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের কাছে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ যেন রূপকথার রাজ্য৷ কিন্তু তবুও ছেলে মেয়েদের স্বার্থে মা বাবারা সব করতে পারেন। তাই এবার সন্তানরা যাতে দূরদর্শনে অনলাইন ক্লাস করতে পারে তাই নিজের মঙ্গলসূত্র বেচে দিলেন মা।
তিনি কর্নাটকের গাদাগ জেলার বাসিন্দা কস্তুরী চালাভাডি। কস্তুরীর স্বামী মুত্তাপ্পা দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু করোনার প্রভাবে এখন কোনও কাজ নেই তাঁর। এই দম্পতির বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং আরও তিন ছেলে-মেয়ে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।
কস্তুরী জানিয়েছেন, ‘দূরদর্শনে বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমাদের টিভি ছিল না। অন্যের বাড়িতে গিয়ে টিভিতে ক্লাস করত। কিন্তু এতে অসুবিধে হচ্ছিল। আমি যখন বুঝলাম যে টিভি না থাকার কারণে আমার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত্ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, তখন ঠিক করলাম যে টিভি কিনতেই হবে। আমাকে কেউ লোন দিতে রাজি হয়নি। তাই শেষপর্যন্ত মঙ্গলসূত্রটাই বন্ধক রাখার সিদ্ধান্ত নিই।’
তাঁর মঙ্গলসূত্রে ১২ গ্রাম সোনা রয়েছে। এই সামান্য সম্বলটুকু বন্ধক রেখে সেই টাকা দিয়ে সন্তানদের জন্য টেলিভিশন সেট কিনলেন তিনি, যাতে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। এই ঘটনার কথা জানতে পারেন স্থানীয় তহশিলদার। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিনি গ্রাম আধিকারিকদের নির্দেশ পাঠান।
বিষয়টি প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত পৌছঁ গিয়েছে বুঝতে পেরে কস্তুরীর মঙ্গলসূত্র ফিরিয়ে দেন বন্ধকী কারবারী। ধার নেওয়া টাকা কস্তুরী পরে সুবিধেমতো ফেরালেই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এই ঘটনা জানাজানি হতে স্থানীয় বাসিন্দারাও ওই পরিবারের আর্থিক সাহায্যের জন্য চাঁদা করে কিছু টাকা তোলেন। অর্থ সাহায্য করেন স্থানীয় নেতারাও। কস্তুরীর পরিবারের জন্য ৫০,০০০ টাকা পাঠান কংগ্রেস বিধায়ক জামির আহমেদ।