অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার যেন আসামে বন্যার প্রকোপ অনেকটা বেশি। তার জেরে বিগত কয়েকমাস ধরেই সেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এখনও জলের তলায় রয়েছে। ক্রমশ অবনতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। এর জেরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাজিরাঙা। এই অভয়ারণ্যের পশুরাও প্রতিবছর বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বছর একবার নয়, দুবার বন্যায় কবলিত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অভয়ারণ্য। গত একমাসে ব্রহ্মপুত্রের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ব্রহ্মপুত্রের শাখা ও উপনদীগুলির জলও ছাপিয়ে গিয়েছে। ফলে এ বছর ২৩টি জেলা ভয়ংকর রকমের বন্যার কবলে পড়েছে। বাদ যায়নি অভয়ারণ্যের পশুরা।
বন্যায় প্রাণ বাঁচলেও খাবারের টান পড়েছে। বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে কাজিরাঙার ঘাসের জমি। জল নামা না পর্যন্ত সেই জমিতে আবার নতুন করে ঘাস গজানো অসম্ভব। কিন্তু জল নামছে কই। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠছে। হাতি, হরিণ কাজিরাঙা ছেড়ে পাশের করবি আংলংয়ের পাহাড়ি এলাকায় পারি দিয়েছে। বন্যার হাত থেকে বাঁচতে ও খাবারের খোঁজে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু জায়গায়।
কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কের ৯৫ শতাংশই জলের নীচে। তার ফলে শুধু মানুষ নয়, বানভাসী পরিস্থিতি বন্যপ্রাণীরও। ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়ানো এই ন্যাশনাল পার্কের বেশিরভাগটাই জলের নীচে ডুবে যাওয়ায় প্রাণ হারিয়েছে বহু বন্যপ্রাণী। বন্যায় জীবন বিপন্ন দেখে জঙ্গলের ৯০ শতাংশ হরিণ পাহাড়ি এলাকায় চলে গিয়েছে। কাজিরাঙা ডিএফও রমেশ গগৈ জানিয়েছেন, “ভয়ঙ্কর বন্যাতেও পশুরা মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু এ বছরের অবস্থা অন্যান্য বছরের তুলনায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এক বছরেই বহুবার বন্যার আঘাত সহ্য করে চলেছে কাজিরাঙা জাতীয় অভয়ারণ্য। জঙ্গলের সব তৃণভমি এখনও জলের তলায়।”
এদিন তিনি এও জানান, “গণ্ডার ও বন্য মোষ শুধুমাত্র তৃণ খেয়েই বেঁচে থাকে। ওটাই ওদের খাদ্য। বন্যায় সব ডুবে যাওয়ায় তাদের খাবারের অনেক ঘাটতি দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে হরিণের জন্য দরকার তাজা ঘাস। এর ফলে বনদফতরের চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে।” গগৈ জানিয়েছেন, “কাজিরাঙার এখন সবচেয়ে আগে যেটি দরকার সেটি হল পুনরায় ঘাসের জমি তৈরি করা। কিন্তু সেই জমি ও তৃণ উত্পাদন বাড়ানোর জন্যও দরকার শুষ্ক জমি। কিন্তু পর পর তিন বছর ক্রমাগত বন্যায় সেই ঘাটতি কিছুতেই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
বৃহস্পতিবার কাজিরাঙা অভয়ারণ্য থেকে একটি রিপোর্ট সর্বসমক্ষে আনা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, জঙ্গলের ৬০ শতাংশ এখনও জলের তলায় ডুবে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৪৩টি পশু মারা গিয়েছে। তার মধ্যে হরিণই মারা গিয়ে ১০৪টি। অন্যদিকে, বন্যার জলে ডুবে মারা গিয়েছে ৫০টি পশু ও গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর চোট পেয়েও মারা গিয়েছে ১৮টি। তিনি আরও জানিয়েছেন, “যে সব পশুরা নিজে থেকেই জঙ্গল ছেড়ে পার্বত্য এলাকার দিকে চলে যাচ্ছে, তাদের যাতায়াতের পথে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। হাইওয়ে পার করে অনেক পশু অন্যত্র চলে যাচ্ছে, সেখানেও আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।”