এতদিন যা হয়নি, মোদী জমানায় এবার সেটাই হয়েছে। দেশের শিক্ষানীতিকে আমূলে বদলে ফেলতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যা নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র সমালোচনা। কেউ বলছেন, অসঙ্গত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তো কেউ আবার বলছেন, স্বৈরতান্ত্রিক এবং গৈরিক। দিল্লী থেকে ঘোষিত জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে বিরোধী নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ, শিক্ষক সংগঠন, শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত মানুষের এটাই মতামত। পাশাপাশি শিক্ষার বিষয়টি সংবিধানে যৌথ তালিকায় থাকা সত্ত্বেও বুধবার একতরফা ভাবে কেন কেন্দ্র জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সংসদকে কেন সরকার এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিল, তা নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণার পর সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অভিযোগ করেন, সংবিধানে শিক্ষাকে রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ তালিকায় রাখা হলেও একতরফা ভাবে কেন্দ্র এই নীতি ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন রাজ্য সরকার এই নীতির বহু বিষয়ে আপত্তি করেছিল। তাকে আমলই দেয়নি মোদী সরকার। আবার শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাবিদেরা নানা বিষয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার একটিও বিবেচনা করা হয়নি। ইয়েচুরির অভিযোগ, সংসদে আলোচনাতেও বিশ্বাসী নয় কেন্দ্র। তাই সংসদের বাইরে তারা শিক্ষানীতির ঘোষণা করেছে। শেষ প্রসঙ্গটি নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুরও।
তাঁর কথায়, ১৯৮৬- র পরে শিক্ষানীতিতে বদল আনতে চাওয়াটা একটা বিরাট পদক্ষেপ। বিজেপি সরকার যে ঘোষণা করেছে, তাতে অনেক কিছুই স্বাগত জানানোর আছে। কিন্তু যে ভাবে সংসদকে এড়িয়ে এই নীতি ঘোষণা করা হল, তাকে সমর্থন করা যায় না। থারুরের প্রশ্ন, ‘সংসদের আলোচনাকে এত ভয় কেন বিজেপি সরকারের?’ থারুর জানিয়েছেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হয়ে তিনিও উঠেপড়ে লেগেছিলেন জাতীয় শিক্ষানীতিকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে তুলতে। ১৯৮৬-তে শেষ বার সরকার একটা শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছিল। তার পরে কত সরকার এসেছে-গিয়েছে, তারা শুধু নামমাত্র ফেরবদল করে সেই ব্যবস্থাটাই ধরে রেখেছেন।
টুইটে তারুর বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় প্রতিটি সরকার জিডিপি-র অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যবহারের পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু বছরের শেষে সে পথে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় অর্থ মন্ত্রক।’ তবে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার যে শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দ প্রতি বছর পরিকল্পনা করেই কমিয়ে চলেছে, সেই তথ্যও তিনি দেন। আবার ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি অভিযোগ করেন, বিজেপি সরকারের নতুন শিক্ষানীতি আসলে আরএসএসের সাম্প্রদায়িক কর্মসূচীর বাস্তবায়ন। এটা সব রাজ্যে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডিএমকে সাংসদ বলেন, ‘আমি আশা করব, তামিলনাড়ু সরকার এই শিক্ষানীতি খারিজ করবে। কী বিদ্যালয়ের পড়ুয়া কী উচ্চশিক্ষার পড়ুয়া— এই নীতিতে কারও উপকার হবে না।’