শহরের করোনা রোগীদের সুবিধার্থে এবার নতুন উপায় বের করল কলকাতা পুরসভা। এখন থেকে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহ হলেই সরাসরি ফোন করতে পারবেন কলকাতা পুরসভার বরোভিত্তিক নিজস্ব কলসেন্টারে। সেই ফোন রিসিভ করবেন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একজন করোনাজয়ী। ঠিকানা জেনে মোটরবাইক নিয়ে দ্রুত পৌঁছে যাবেন অসুস্থের বাড়িতে। সাথে সাথে সেই রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা করবেন, ফোনে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে ওষুধও দেবেন। যদি হাসপাতালে তখনই ভর্তির প্রয়োজন হয় তারও চটজলদি ব্যবস্থা করবেন করোনাজয়ী ওই যোদ্ধারা। অ্যাম্বুল্যান্স তক্ষুণি না পাওয়া গেলে কোভিড যোদ্ধার সঙ্গের বাইকই অ্যাম্বুল্যান্সের কাজ করবে, পৌঁছে দেবে হাসপাতালে।
কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উদ্যোগে এভাবে মোটরবাইক নিয়ে করোনা আক্রান্তকে পরিষেবা দেবেন কোভিডজয়ীরা। তিন শিফ্টে ভাগ করে ২৪ ঘণ্টাই পুরসভার প্রতিটি বরো অফিসের কল সেন্টারে ডিউটি করবেন শহরের সেই করোনাজয়ীরা। রবিবার পুরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশাসক তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, “পুরসভার ১৬টি বরোতেই চালু হচ্ছে এই কলসেন্টার। দায়িত্বে থাকবেন করোনাজয়ীরা। ফোন পেলেই মোটরবাইক নিয়ে পৌঁছে যাবেন রোগীর বাড়িতে। প্রাথমিক চিকিৎসা, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ দেওয়া, ভর্তির ব্যবস্থা সবটাই করবেন তাঁরা।”
করোনা রোগীর ভরতি ও দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে কলকাতায় যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তা ১৬টি কলসেন্টার চালুর মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলতে পুরমন্ত্রীর এমন পরিকল্পনা। যেহেতু ওই কোভিড যোদ্ধারা সুস্থ হয়ে ফিরেছেন, তাই তাঁদের শরীরে মারণ ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে। বস্তুত এই কারণেই করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগীর কাছে গেলে কোনও ঝুঁকি থাকবে না। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা বাইক নিয়ে গেলে ওই সন্দেহভাজন রোগীর থেকে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই এমন পরিষেবায় কোভিডজয়ীদের নিয়োগ করছে পুরসভা।
পুরসভার ১৬টি বরো অফিসে নিয়োগের আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে সমস্ত কোভিড জয়ীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কারণ, ওই কোভিড যোদ্ধারাই শহরের করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মেনে এ জন্য প্রতি মাসে এই কোভিড যোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা করে সান্মানিক পাবেন। স্বাস্থ্যভবনের তথ্য, এখনও পর্যন্ত কলকাতায় প্রায় ১১ হাজার মানুষ করোনামুক্ত হয়ে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরেছেন।
মহানগরের এই করোনাজয়ীদের মধ্যে সমাজের নানাস্তরের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। অতীন ঘোষের কথায়, “বিশিষ্ট করোনাজয়ীদের দিয়ে কোভিড মোকাবিলায় সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হবে। আর আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া অন্য করোনাজয়ীদের কোভিড হাসপাতালে, সেফ হোম, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে করোনা মোকাবিলায় নানা কাজে নিয়োগ করা হবে।”