উত্তরপ্রদেশে সাংবাদিক খুনে তোলপাড় গোটা দেশ। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ যোগী রাজ্যের গাজিয়াবাদে দুই মেয়ের সামনেই খুন হয়েছেন বছর ৩৫-এর সাংবাদিক বিক্রম যোশি। ২০ জুলাইয়ের এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুই মূল অভিযুক্ত-সহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এবার প্রকাশ্যে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন খুন হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগেও পুলিশকে ফোন করেছিলেন বিক্রম। জানিয়েছিলেন যে তাঁর ওপর হামলা হতে পারে। সাংবাদিকের পরিবারের অভিযোগ, সেদিন বিক্রমের ফোনে বিশেষ পাত্তা দেয়নি পুলিশ। তারপর বিক্রমের আশঙ্কাই সত্যি হয়।
জানা গিয়েছে, বোনঝির জন্মদিন উপলক্ষে যখন তাঁর দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাতা কলোনি এলাকায় বোনের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিক্রম, তখন দেখেন তাঁর বোনের বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছে রবি এবং ছোটু নামের দু’জন। সূত্রের খবর, বিক্রমের ওপর হামলা হওয়ার দিন দুয়েক আগে এই দু’জনের সঙ্গে ঝামেলা হয় বিক্রমের। অভিযোগ, এই দুই যুবক বিক্রমের বোনঝিকে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করছিল। সে বারের ঝামেলা থানা পর্যন্ত গড়ালেও বিক্রমের কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত হয়নি থানায়।
বিক্রমের বোনের পরিবার জানিয়েছে, রবি এবং ছোটুকে দেখার পর সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ থানায় ফোন করেন বিক্রম। তবে তাঁর কথায় কান দেননি অফিসার ইন-চার্জ। উল্টে বলেন যে ব্যবস্থা নেওয়ার পরের দিন সকালে নেওয়া হবে। অভিযোগ, এর ঘণ্টা দুই পর রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বোনের বাড়ি থেকে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মোটরবাইকে করে ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হন বিক্রম। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ যদি অন্তত একবার বিক্রমের কথাটা শুনত, একটু ব্যবস্থা নিত, তাহলে হয়তো মানুষটা আজ বেঁচে থাকতেন।
জানা গিয়েছে, সেদিন থানার দায়িত্বে থাকা অফিসার ইন-চার্জকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রবি কুমার এবং শাহনুর ওরফে ছোটু ছাড়া আরও ২ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে বিক্রমের পরিবার। রবি এবং ছোটু, এই দুই মূল অভিযুক্ত-সহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা আশ্বাস দিয়েছে যে বিক্রমের খুনের ঘটনায় জড়িত কোনও অপরাধী ছাড়া পাবে না। সব দোষীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও এই ঘটনায় যোগী সরকারকে ছেড়ে কথা বলেনি বিরোধীরা। কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, প্রকাশ্যে এইভাবে সাংবাদিককে খুন করা উত্তরপ্রদেশ সরকারের গুন্ডারাজের উদাহরণই ফের প্রকট করে তুলছে। দিনে দিনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা উত্তরপ্রদেশে বেড়েই চলছে। যোগী আদিত্যনাথের সরকার উত্তরপ্রদেশে গুন্ডারাজ এবং জঙ্গল রাজ চালাচ্ছে। আর অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বললেই সাংবাদিক এবং তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করা হচ্ছে।