গত মঙ্গলবার ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে রাজ্যে আগামী একুশের বিধানসভা ভোটের বাদ্যি বাজিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক তার দু’দিন বাদে একেবারে তৃণমূল কংগ্রেস দলের অন্দরেই রণডঙ্কা বাজালেন তিনি। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম দলের সাংগঠনিক স্তরে এত বড় পরিবর্তন করতে দেখা গেল তৃণমূল নেত্রীকে। দলের কোর কমিটি বদলাল, রাজ্য কমিটি বদলাল, প্রায় প্রতিটি জেলাস্তরে সংগঠন বদলাল, এমনকী তৃণমূলের যুব সংগঠনেও আমূল বদল আনলেন মমতা।
আজ একদম শুরুতেই তিনি তারুণ্যে জোর দিলেন। কোচবিহারে পার্থপ্রতিম রায়, হাওড়া শহরে লক্ষ্মীরতন শুক্লা, বাঁকুড়ায় শ্যামল সাঁতরা। একুশের আগে তৃণমূলনেত্রীর বাছাই করা টিমে জেলা সভাপতি পদে একের পর এক তরুণ মুখ। আরও একটি বিষয় হল স্বচ্ছতা। জেলাস্তরে তো বটেই রাজ্য কমিটিতেও জায়গা দেওয়া হয়েছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদেরই। ২০১৯ লোকসভা ভোটের পর গত ১ বছর ধরে মমতা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দলের নেতানেত্রীদের মূল্যায়ন করেছেন। আর নেত্রীর মূল্যায়নে যারা যারা ‘ফেল’ করেছে, তাঁদের হয় পুরোপুরি সরে যেতে হয়েছে না হয় তাঁদের ডানা ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলনেত্রী একেবারে জেলাস্তর থেকে তৃণমূলস্তর পর্যন্ত দুর্নীতি মুক্ত করার কাজ শুরু করলেন।
আরও একটি কাজ মমতা করলেন, সেটা হল নিষ্ক্রিয়দের দল থেকে সরিয়ে দেওয়া। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার দরুন দলের অনেক নেতাই বড় পদ ধরে বসেছিলেন, কিন্তু মাঠে ময়দানে সেভাবে দেখা মিলছিল না তাঁদের। তাঁদেরও এবার হয় ছেঁটে ফেলা হল, নতুবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে দেওয়া হল। যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র দুর্নীতি বা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আছে, তাঁদেরই শাস্তি দিলেন মমতা।
এছাড়াও দলের সাত সদস্যের কোর কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। পাহাড়ের প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন শান্তা ছেত্রীও। সঙ্গে রয়েছেন সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং অভিষেক বন্দ্যাপাধ্যায়। কোর কমিটি থেকে বাদ পড়তে হয়েছে খোদ অরূপ বিশ্বাসকে। একসময় যাকে ‘দিদি’র কাছের লোক বলে মনে করা হত। সংগঠনে তিনিই এখন ব্রাত্য। এমনকি এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অর্থাৎ ২১-এর আগে মমতা স্পষ্ট বার্তা দিলেন, “দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়”।