লকডাউনে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায় কর্মীদের বিশেষ কোনও কাজ না থাকায় তাঁদের দিয়ে এবার ব্যবসার দিকটা ঝালিয়ে নেওয়া শুরু করল রেল। বাংলার চাল ও আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রেলের সম্পর্ক মজবুত করতে এবার টিকিট পরীক্ষক থেকে বুকিং ক্লার্কদের মাঠে নামানো হল। যার ফলে, টিকিট বিক্রি ও টিকিট চেকিং করাই যাঁদের কাজ, সেই তাঁরাই নাকি এখন হুগলি, বর্ধমান, বীরভূমের রাইস মিল থেকে আলুর আড়ত চষে বেড়াচ্ছেন। মার্কেটিংয়ে পটু না হয়েও এই কাজ করতে হচ্ছে রেলের আয় বাড়াতে।
হাওড়া ডিভিশনের সিনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজীব রঞ্জন জানিয়েছেন, যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা এখনও চালু হয়নি। প্রায় কর্মহীন দশা, এদিকে পণ্য পরিবহণের জন্য পার্সেল ভ্যান ও মালগাড়ি চলছে। সড়ক পরিবহণ ব্যবহারকারী রাইস মিল ও আলু ব্যবসায়ীদের রেলের দিকে টানতে কমার্শিয়াল বিভাগের কর্মীদের বর্ধমান, সাইথিয়া ও তারকেশ্বরের বিভিন্ন মিলে পাঠানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, আসাম ও দিল্লীতে বাংলা থেকে প্রচুর চাল যায়। তারকেশ্বরের আলু যায় আসাম, ঝাড়খন্ড ও উড়িষ্যায়। ট্রাকের মাধ্যমে এই সামগ্রী যাতায়াত করে। রেলে এই পণ্য পাঠাতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তুলতে মার্কেটিং করছেন ট্রাফিক ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে বুকিং, গুডস সুপারভাইসাররা।
জানা গিয়েছে, বর্ধমানের ৩৬টি রাইস মিলের আটটিতে তাঁরা মঙ্গলবার মালিকদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। যদিও রেলে সময় সাশ্রয় হলেও খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি ব্যবসায়ীরা। বর্ধমানের টিমের নেতৃত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বি প্রসাদ জানান, ট্রাকে প্রতি টনের ভাড়া ১৩৯৬ টাকা। সেখানে রেলের ভাড়া ১৪০০ টাকা। এরপর বাড়তি চাপ যেটা ব্যবসায়ীদের কাছে তা, মিল বা আড়ত থেকে ইয়ার্ডে মাল নিয়ে যাওয়া, গন্তব্যে পৌঁছে একইরকম ভাবে ইয়ার্ডে আনলোড করে পণ্য গুদামে নিয়ে আসা। এই ঝক্কিতে প্রতি টনে বাড়তি ৩০০ টাকা পড়বে। এটা মুখ্য সমস্যা হিসাবে রেলের সামনে এসেছে।
সিনিয়র ডিসিএম রাজীব রঞ্জনের কথায়, বেশি পরিমাণ পণ্য হলে ভাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। কমপক্ষে ১২০০ থেকে ২৫০০ টন একসঙ্গে পার্সেল ভ্যানে গেলে সড়ক পথের চেয়ে রেলে ভাড়া অনেক কমে যাবে। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে যাতে তাঁরা একসঙ্গে পণ্য পরিববহণে সামিল হন। এজন্য যত রকমের সুবিধা দেওয়া যায় তা দেখবে রেল। তারকেশ্বরের আলু ব্যবসায়ীরা অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষ আগ্রহ দেখাননি। আবার আসাম, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যার মতো স্বল্প দূরত্বে পণ্য পরিবহণ করে রেলও খুব বেশি আয়ের পথ সুগম করতে পারবে না বলে মনে করেছেন কর্তাদের একাংশ।