গতকাল বন্যা বিধ্বস্ত বিহারের দারভাঙা জেলার একটি ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছিল, গলা সমান জলে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে প্রসবের জন্য হাসপাতাল নিয়ে যেতে হচ্ছে ডিঙিতে চাপিয়ে। এবার তার চেয়েও এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটল ছত্রিসগড়েও। বর্ষায় জল বেড়ে নদীর পাড় ভাঙায় এবং রাস্তার হাল খারাপ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে পার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন স্বামী। তবে ১৫ কিলোমিটার সড়কপথে যাননি এই দম্পতি। বদলে নদী বরাবর পেরিয়েছেন গোটা রাস্তায়। বৃষ্টির জলকাদায় রাস্তাঘাট পিছল থাকায় স্ত্রীকে রান্না করার বড় পাত্রে বসিয়ে দু’দিকে খুঁটি লাগিয়ে সেটাকে বয়ে নিয়ে নদী পার হয়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বার স্বামী।
তবে হাসপাতালে পৌঁছেও লাভ হয়নি। মৃত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই মহিলা। গোটা ঘটনায় ডাক্তার এবং নার্সদের দায়ী করেছেন মহিলার স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে ছত্রিশগড়ের বিজাপুর জেলায়। সেখানকার ভোপালপতনম টাউনের কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে লক্ষ্মীকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী হরিশ। তাঁর অভিযোগ, স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করলেও প্রাথমিক ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেননি নার্সরা। আর যতক্ষণে চিকিৎসা শুরু হয়েছে তখন আর বাচ্চাটিকে বাঁচানো যায়নি। জন্মের আগেই মারা যায় সে।
হরিশ জানিয়েছেন, ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীকালে আরও বড় পদক্ষেপ নেবেন বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ব্লক অফিসার জানিয়েছেন, ওই হাসপাতালের তিনজন কর্মীকে ইতিমধ্যেই শোকজ করা হয়েছে। হরিশের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, গত ১৩ জুলাই প্রসব বেদনা শুরু হয় লক্ষ্মীর। কিন্তু গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্স আসার সুযোগ না থাকায় রান্না করার ডেচকি জাতীয় একটি বড় পাত্রে স্ত্রীকে বসিয়ে তার দু’পাশে কাঠের খুঁটি লাগিয়ে সেটাকে বয়ে নদীপথে ১৫ কিলোমিটার পার হয়ে গোরলা বলে একটি জায়গায় পৌঁছন হরিশ। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে লক্ষ্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হরিশের অভিযোগ, বিকেল চারটে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছে গেলেও রাত ৮টা অবধি লক্ষ্মীর দিকে কোনও নজরই দেননি দায়িত্বে থাকা নার্সরা। প্রসব যন্ত্রণায় লক্ষ্মী কাতর হয়ে গেলেও বারবার নার্সরা নাকি বলেন, ‘ধৈর্য ধরুন। ঠিক সময়ে ডেলিভারি হবে।’
এরপর রাত আটটা নাগাদ নার্সরা প্রবল যন্ত্রণার মধ্যেই জোর করে লক্ষ্মীর নরমাল ডেলিভারি করাতে যান বলে অভিযোগ করেছেন হরিশ। অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারদের ডাকেন নার্সরা। হরিশ জানিয়েছেন, ওই ডাক্তারের সেদিন ডিউটি থাকলেও তিনি সময়ে হাসপাতালে আসেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি এলেও লাভ হয়নি কিছুই। মৃত সন্তানের জন্ম দেন লক্ষ্মী। হরিশের কথায়, ডাক্তার জানিয়েছেন আর কিছুক্ষণ দেরি হলে হয়তো লক্ষ্মীকেও বাঁচানো যেত না। ডাক্তার-নার্সদের গাফিলতি এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবেই তাঁর স্ত্রীয়ের সঙ্গে এমন হয়েছে বলে অভিযোগ হরিশের।